মোঃ বিল্লাল হোসেন,
শেরপুর প্রতিনিধি ঃ
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা সহবিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ স্থানীয়বাসিন্দারের।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আয়নাপুর গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে, তিনি কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরে পঞ্চম বারেরমতো ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনশ্রুতি রয়েছে তিনি কাংশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী নেতাদের সাথে আতাত করে নানা দুর্নীতির সাথে জরিয়ে পরেন।
টাকার বিনিময়ে অর্থশালীদের মাঝে ভিজিডি কার্ড বিতরন ও আত্মীয় সজন ও সুভাঙ্কাকিদের মাঝে ভিজিডি কার্ড বিক্রি ও বিতরন করা হয় । এ ছাড়া গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার কর্মসূচির কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের সরকারি অর্থ ভুয়া প্রকল্প সাজিয়ে আত্মসাৎসহ ভিজিডি, ভিজিএফ এর চাল বিতরনে ওজনে কারচুপি ও কালোবাজারে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ, কাংশা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নেই।
ফলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার বাড়ির সামনেই আয়নাপুর বাজারে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর ও পূর্বাংশের শতশত মানুষের গত ৩ বছরের উপরে সময় ধরে সেবা গ্রহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নওকুচি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন বলেন তার এলাকা থেকে ১০ কেজি ভিজিএফএর চাল আয়নাপুর থেকে আনতে যাতায়াত খরচ দিতে ২০০ টাকা।
ফলে অনেক দরিদ্র দিনমজুর পরিবার চাল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, কাংশা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকলেও ইউনিন পরিষদ ভবনের মাঠে মাটি ভরাটের নামে ভূয়া প্রকল্প সাজিয়ে ২০২২,২৩ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার কর্মসূচির ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। অভিযোগে প্রকাশ, গত ২৯ মে রাতে আয়নাপুর থেকে ২১ বস্তা ভিজিডির চাল পাঁচারকালে কারাগাঁও এলাকা থেকে আটক করে থানা পুলিশ।
এব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও মামলাটি হয়েছে ভ্যানচালকের নামে। অথচ গডফাদাররা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনশ্রুতি রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে কাংশা ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মীরা গারো পাহাড়ের নদী, খাল- বিল ও পাহাড় কেটে অবাধে পাথর ও বালুসহ বনজ সম্পদ লুটপাটে মেতে উঠে।
প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মুল্যের খনিজ সম্পদ পাঁচার করা হয় । বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ বিভিন্ন সময় অভিযান ও পরিচালনা করে আসলেও তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না । গত এক সপ্তাহে বনবিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে বালু ভর্তি ৩ টি মাহিন্দ্র আটক করে বন বিভাগ।
বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে লোকবলের অভাবে নিরাপত্তা জনিত কারণে পাথর বালু লুটপাট বন্ধে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে । ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনম আব্দল ওয়াদুদ বলেন পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট কে করছেন তা আপনারা যেমন যানেন। এ কারনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে গারো পাহাড়ের পাথর বালু লুটপাট বন্ধে আতাউর রহমান কোন ভুমিকাই পালন করেননি।
তবে বালু পাথর লুটপাটের বিষয়ে আতাউর রহমান বলেন তার দলের নেতা কর্মিরা জড়িত থাকলেও তিনি এসবের সাথে জরিত নেই। অপর দিকে ২০২৪ /২৫ অর্থ বছরে কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামীন অবকাঠামো কর্মসুচি কাবিটা, কাবিখার ৪ টি প্রকল্পের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজের সভাপতি হন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
চলতি বছরের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও গত কয়েক মাসেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।প্রকল্পের না করেই প্রথম কিস্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ বিল তোলার জন্য নানাভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে আসছেন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারার বিষয়টি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও চেয়ারম্যানের ছবিসহ ভাইরাল হয়।
পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারিদের সাথে এক বৈঠকে বসে আপোষ মিমাংসাও করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। বর্তমানে বিষয়টি টক অফ দা টাউনে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন আমাকে আয়না দেখানোর চেষ্টা করবেন না। তিনি আরও বলেন আমি বিএনপি সমর্থীত তাই এসব কিছু আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন প্রকল্পে কাজে গরমিল হওয়ায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো, রাজীবুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজে অনিয়ম থাকায় পুরো কাজ সম্পূর্ণ করে বিল নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কে বলা হয়েছে। কাজ সম্পূর্ণ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বিল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
বার্তাপ্রেরকঃ- মোঃ বিল্লাল হোসেন, শেরপুর।
মোবাঃ-০১৮৩১৬১৮২৮৮
তাং ০৪। ০৬/২৫ইং