রাউজান প্রতিনিধিঃ
মো আবদুল লতিফ নাহিদ
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে এ বছর আশানুরূপ পরিমাণে ডিম ছেড়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউস প্রজাতির মা মাছ। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ২টার দিকে জোয়ারের সময় শুরু হয় এই ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া। প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় মা মাছ পূর্ণোদ্যমে ডিম ছাড়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, হাটহাজারীর আমতুয়া এলাকায় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরপর ডিম ছড়িয়ে পড়ে নদীর বিভিন্ন অংশে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাটহাজারী ও রাউজানের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, এ বছর প্রায় ৪০০টি নৌকা নিয়ে ৭০০ জনেরও বেশি ডিম আহরণকারী নদীতে অংশ নেন। কেউ ৩-৪ বালতি, কেউবা ৭/৮ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। যারা প্রাথমিকভাবে নদীতে অবস্থান নেন, তারা তুলনামূলক বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
হালদা নদীর প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিস বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই আমরা নদীতে ছিলাম। রাত ২টার দিকে মা মাছ ডিম ছাড়ে। আমি ৪/৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি।” ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম জানান, “নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ৪ থেকে ৫ বালতি ডিম পেয়েছি।”
হালদা ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, তাঁদের ৬টি নৌকা ও ২টি বাঁশের ভোরকা দিয়ে মোট ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
ডিম সংগ্রহের পরপরই নদীর পাড়ে তৈরি অস্থায়ী হ্যাচারিগুলোতে রেনু ফোটানোর কাজ শুরু করেছেন ডিম আহরণকারীরা। যদিও মা মাছের মোট ডিম ছাড়ার পরিমাণ এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি, তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, এ বছর ডিম ছাড়ার হার সন্তোষজনক এবং ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির বাটনাতলী পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে হালদা। এটি দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মিঠা পানির রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, যেখানে জোয়ার-ভাটা ও প্রাকৃতিক জলবায়ুর উপর নির্ভর করেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
এপ্রিল থেকে জুন—এই সময়কালকে হালদায় ডিম ছাড়ার মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে এবং নদীর পানির স্তর বেড়ে গেলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষায় সরকার ইতোমধ্যে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।