চট্টগ্রামের বন্দর থানার গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রীকে হত্যার দায়ে রুজুকৃত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি ঘাতক স্বামী কাজী মোঃ পেয়ার আহম্মদ প্রকাশ রিপন’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব এর সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম হালিমা (২৮) তার স্বামী কাজী মোঃ পেয়ার আহাম্মদ প্রকাশ রিপন (৩৯) এর সহিত ০৯ বছর পূর্বে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই সন্তানের জননী ভিকটিম হালিমা গত ০২ বছর যাবৎ চট্টগ্রামের কেইপিজেড এর এমএনসি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে আসছিলেন। চাকরির সুবাদে ভিকটিম তার সন্তানদেরকে তার পৈতৃক ভিটা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রেখে নিজ স্বামীর সাথে চট্টগ্রামের বন্দর থানাধীন কলসী দীঘির পাড় এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। ভিকটিমের স্বামী কাজী মোঃ পেয়ার আহাম্মদ প্রকাশ রিপন পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও নিয়মিত কাজ না করে বেশিরভাগ সময় বেকার অবস্থায় ঘোরাফেরা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যার প্রেক্ষিতে টাকা পয়সার জন্য সে তার স্ত্রী ভিকটিম হালিমাকে প্রায়শই মারধর করত। প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ১৪ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখের মধ্যবর্তী কোন সময়ে আসামি কাজী মোঃ পেয়ার আহাম্মদ প্রকাশ রিপন নিজ ভাড়া ঘরে পারিবারিক কলহের জেরে ভিকটিম হালিমাকে শারীরিক নির্যাতন সহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তালাবদ্ধ বাসা হতে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় এবং ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় ১৬ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে আনুমানিক ১১৪৫ ঘটিকায় উক্ত ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার ভিকটিমের ভাইকে মোবাইল ফোনে এ ব্যাপারে অবগত করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আশেপাশের লোকজনের উপস্থিতিতে পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিমের অর্ধগলিত মৃত দেহ খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখে। উল্লেখ্য, ভিকটিমের মুখমন্ডল বিবর্ণ পাওয়া যায় এবং তার মুখ দিয়ে রক্তমাখা তরল পদার্থ নির্গত হতে দেখা যায়। ভিকটিমের গলা ও বুক অর্ধ-গলিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ভিকটিমের বাম হাতের বাহুতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোঃ ইমরান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৫, তারিখ: ১৭ আগস্ট ২০২৪ ইং, ধারা- ৩০২, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত হত্যা মামলার পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারির এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার একমাত্র আসামি কাজী মোঃ পেয়ার আহাম্মদ প্রকাশ রিপন সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানাধীন বগাইয়া হাওর এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এবং র্যাব-৯, সিলেট এর যৌথ আভিযানিক দল গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে আনুমানিক ২১১০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামি ঘাতক স্বামী কাজী মোঃ পেয়ার আহাম্মদ প্রকাশ রিপন (৩৯), পিতা- মৃত কাজী আব্দুল মান্নান, সাং- মান্নান কোম্পানীর বাড়ী, থানা- চৌদ্দগ্রাম, জেলা- কুমিল্লা, বর্তমানে- কলসী দীঘির পাড়, থানা- বন্দর, চট্টগ্রাম মহানগরী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ বর্ণিত হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রামে ছেড়ে সিলেট জেলায় আত্মগোপন করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানা পুলিশের অধিযাচনের প্রেক্ষিতে সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
Post Views: 89