আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও বিএনপি
মাসুম শাহরিয়ার
কথায় আছে যত দোষ নন্দ ঘোষ। আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ক্ষেত্রে একথায় যেন প্রযোজ্য হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা দাবি করেছেন, বিএনপি তলে তলে সাপোর্ট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে কাজ করছে। ভবিষ্যতে বিএনপিকে তারা ছাড় দেবে না বলে হুশিয়ারী দিচ্ছেন অনেকে।
অপরদিকে নিষিদ্ধের পর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনা করছে। তারা আওয়ামী নিষিদ্ধের আন্দোলনে বিএনপির অংশগ্রহণ না নেওয়ায় কঠোর সমালোচনার মেতেছেন। এমনকি নিষিদ্ধের পর শাহবাগে বিএনপির নামে ‘ভুয়া’-‘ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন তারা বিএনপিকে পঁচাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ আবার দোষারোপ করছেন। তাহলে বলা যায় বিএনপি কিছু করলেও নিজের কাঁধে দোষ চাপছে, না করলেও দোষ আসছে। সুতরাং দলটিকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করা যেতেই পারে।
বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তার নিজস্ব কিছু সিধান্ত থাকতেই পারে। বিগত স্বৈরাচার আমলে বিএনপি সরাসরি রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছে। মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। তাদের প্রতি দমন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তবুও দলটি রাজপথে থেকেছে। দলটি স্বৈরচার আওয়ামী লীগের বিরোধী এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদেরকে সুবিধা দিতে কাজ করে তা বলারও সুযোগ নেই।
সরকার পতনের পর থেকেই দলটিকে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিছু নেতা-কর্মী অবশ্য অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন এটাও সত্য। তাদের বিরুদ্ধে দলটি কঠোর অবস্থানও নিয়েছেন। ব্যক্তিগত বিষয়কেও দলীয় পরিচয় উঠিয়ে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এমনটিও দেখা গেছে।
দেশে আরও অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে। একটি রাজনৈতিক পক্ষ আড়ালে থেকে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে তাদের অপকর্মের চিত্র বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। তবে বিতর্ক সেক্ষেত্রে তা যেন নিতান্তই। অপরদিকে বিএনপির ক্ষেত্রে বিতর্ক যেন বেশিই সৃষ্টি হচ্ছে। তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় এক্ষেত্রে বিভিন্ন পক্ষ জোটবদ্ধভাবে কাজ করছে।
বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, বিএনপিকে নিয়ে দেশবাসীর কাছে বিতর্কিত করছে একটি মহল প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তাদের দাবি, জনগণ সব বুঝতে শুরু করেছে। বিএনপিকে ষড়যন্ত্র করে লাভবান হওয়া যাবে না। জনগণের ভালোবাসা বিএনপির সাথে আছে।
গত ৫ আগস্ট দেশের মুক্তিকামী সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়।এর আগে প্রায় ১৬ বছর দলটি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের উপর দমন নিপীড়ন চালায়। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলেও তেমন কোন কার্যক্রমের দেখা মেলেনি।
তবে সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামী আব্দুল হামিদ দেশত্যাগ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘটনার পরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহের নেতৃত্ব আন্দোলন শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার (১০ মে) রাতে এক সভায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থাৎ এই নামে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করা যাবে না।
মাসুম শাহরিয়ার।
শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ।