প্রতিনিধি,ববি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড.শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনসহ ২০টি গুরুতর ও সুস্পষ্ট অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ববি শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ। এসময় তারা উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়া সহ পূর্ব ঘোষিত ৪ দফা দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর একটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ২০টি সুস্পষ্ট ও গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেন।
সেগুলো হলোঃ ১.মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অবৈধভাবে পদে থাকা রেজিস্ট্রার এখনও শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করছেন, যা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে। ২. উপাচার্য অবৈধভাবে রাত্রিকালীন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ করছেন, UGC এর নির্দেশনা ও জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিড বিরোধী। ৩. ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন ইউজিসি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ৪. উপাচার্য জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য কম হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন বাড়ছে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রবীণ ও ন্যায়পরায়ণ অধ্যাপক ড. মো. মোহসীন উদ্দিনকে অপমানজনক ভাষায় চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। ৬. শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে। ৭. জুলাই আন্দোলনের সময় যেসব কর্মকর্তা ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবৈধভাবে পদায়ন করা হয়েছে। ৮. শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত না করে একের পর এক হয়রানিমূলক ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
৯. ইউজিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের ২০% খরচ করতে না পারায় পরবর্তী বাজেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অশনিসংকেত। ১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম প্রোভিসির ওপর ন্যস্ত থাকলেও, উপাচার্যের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১১. শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রয়োজনেও উপাচার্যকে সহজে পাওয়া যায় না, যার ফলে বিভিন্ন দপ্তরে কাজের গতি কমে যাওয়ায় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১২. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও, তিনি সপ্তাহে মাত্র দুই-একদিন উপস্থিত থাকেন।
এর ফলে পরীক্ষা, ফলাফলসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৩. উপাচার্য নিয়োগের নয় মাস অতিবাহিত হলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকার থেকে এক টাকারও বাজেট আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। 14.পঞ্চাশ জনের বেশি শিক্ষকের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থাকা সত্ত্বেও, উপাচার্য নিয়োগ বোর্ড গঠন করছেন না। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেশন জট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ১৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট বিদ্যমান থাকলেও, প্রশাসন এর সমাধানে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ১৬. শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধার অভাব রয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজর নেই।
১৭. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে কোনো সেমিনার বা সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করছে না, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন ও একাডেমিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। ১৮. দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট মান্ধাতার আমলের স্যাঁতসেঁতে ইটের তৈরি রয়ে গেছে এবং পাকা রাস্তা নির্মাণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ১৯. অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য আলাদা হল থাকলেও, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সুবিধা নেই। প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন। ২০. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নাল প্রকাশনা অনিয়মিত, ফলে শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান ও গবেষণার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই অভিযোগ গুলোর প্রেক্ষিতে তারা উপাচার্য তাদের পূর্ব ঘোষিত ৪ দফা ( ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন ও বিতর্কিত সকল কর্মকাণ্ডের জন্য উপাচার্যকে ক্ষমা চাওয়া ; ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার এবং তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে পুনর্বহাল করা; আওয়ামী লীগের পদধারী রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অবিলম্বে অপসারণ করা এবং ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীদের অপসারণ করা ) দাবিগুলো মেনে নেয়ার জন্য দুইদিনের আল্টিমেটাম দেন। দুই দিনের মধ্যে তাদের দাবিগুলো মেনে না নিলে তারা কঠিন কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চের মুখপাত্র রাকিন খান বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে একটু ভিন্ন চিত্র দেখতে চেয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। চেয়েছিলাম এমন একটা বিদ্যাপীঠ, যেখানে থাকবে না কোনো স্বৈরাচার, যেখানে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ থাকবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু আমাদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে চলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আজ স্বৈরাচারের দোসরদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বিপ্লবীদের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বিপ্লববিরোধী কোনো কার্যক্রমের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আগামী দুই দিনের মধ্যে যদি আমাদের যৌক্তিক চার দফা দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ এমন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে, যা এই স্বৈরাচারী প্রশাসনকে কাঁপিয়ে দেবে। ফ্যাসিবাদের সমূলে উৎপাটনের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে।