
কোনো কিছু পাওয়ার আশা নয়, শুধুই বিবেকের তাড়নায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে টিনের ব্যারিকেড তৈরি করে স্বৈরশাসকের গুলির সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন স্যানিটারি মিস্ত্রি নাসির খান। পুলিশের বন্দুকের সামনে জীবনের পরোয়া না করে ঢাল হয়ে দাঁড়ান তরুন-তাজা প্রাণগুলোকে বাঁচাতে। আন্দোলনের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সঙ্গে।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় একটি ছবি অনেককেই নাড়া দেয়। এক যুবক টিনের ঢাল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন পুলিশের গুলির সামনে। তিনিই আরামবাগের বাসিন্দা নাসির খান। ছিমছাম গড়নের এ মানুষটি পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। সম্পৃক্ত নন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। তবে, চোখের সামনে স্বৈরাচার সরকারের নির্মম অত্যাচার-জুলুম দেখে চুপ থাকতে পারেননি।
নাসির খান বলেন, ‘সোনারগাঁও হোটেল থেকে আমরা টিন ছুটাই। টিনটা তো অনেক বড় থাকে। আমি এটাকে দুই টুকরা করি। টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট এগুলো যখন ছুড়ছিল সেটাকেই আমরা প্রতিরোধ করার জন্য এটাকে ঢাল বানিয়ে সামনে আগাতে থাকি।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাওয়া মানুষটি দেশকে ভালোবেসেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নেমে এসেছিলেন রাজপথে।
নাসির খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, কোনো দলের সাথেই আমি জড়িত না। ওই যে জানালার ভেতর থেকে গুলি করে, এতে একজন বাচ্চা মারা যায়। এর পর থেকে আমি এলাকার বাহিরে আন্দোলন শুরু করি। সে সময় আসলে মাথায় ছিল না যে গুলি লাগলে আমার কি হবে বা আমি আহত হলে কি হবে, এই বিষয়গুলো তখন আর কাজ করেনি।’
আন্দোলনের সামনে থেকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সাহস যুগিয়েছিলেন নাসির। আহত হয়েছিলেন ঠিকই। তবে, পরোয়া করেননি মৃত্যুর মতো শেষ পরিণতিকেও।
নাসির খান বলেন, ‘ওই যুদ্ধের মতোই হবে। যুদ্ধ তো আমি আর কখনো দেখি নি। হয়ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আমিও মারা গেছি। আমি তো ভেবেছিলাম হাড় ভেঙ্গে গেছে, এই ভয়ে এক্সরে করি। কিন্তু ওইদিন বুঝতে পারি নি যে কতটা আহত হয়েছি। রিমান্ডে পেটালে যে ব্যাথাটা হয় শরীরে, আমি সেই ব্যথাটা অনুভব করছিলাম। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা।’
কোনো প্রত্যাশা থেকে নয়। অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদই আন্দোলনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে নাসির খানের মতো খেটে খাওয়া এক সাধারণ মানুষকেও।