ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জামায়াত নেতা ও মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইদ্রিস আলী পান্নাকে গত ২০১৬ সালে গুম করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার আট বছর পর ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেছে তার পরিবার।
মামলার এজাহারে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মো. শাহিদুর রহমান (রিপন) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে বরিশাল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। তিনি ও নিহত ব্যক্তি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর (একই) গ্রামের বাসিন্দা।
পরিবারের অভিযোগ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমতার অব্যবহার করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তার নির্দেশেই এ ঘটনার সাথে ৩১তম বিসিএস একই ব্যাচের আরেক পুলিশ কর্মকর্তা গুম ও হত্যার নেতৃত্ব দান করেন। তার নাম গোপীনাথ কাঞ্জিলাল। তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (আরও) হিসেবে কর্মরত আছেন। সেসময় এই পুলিশ কর্মকর্তা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালে ৪ আগস্ট পুলিশের একটি দল সাদা পোষাকে জোরপূর্বক আটক করে মো. ইদ্রিস আলী পান্নাকে, জেলার শৈলকুপা থানার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান। এসময় তার পরিবারের নিকট নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে টাকা দিতে চাইলে, পুলিশ ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে। এঘটনার ৮ দিন পরে ১২ আগস্ট জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দমদমা মাঠ এলাকা থেকে জামায়াত নেতার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের আপন ছোট ভাই আব্দুল হান্নানকে জোর-পুর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত ও পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ থাকায়, এই
ঘটনাটি সড়ক দূর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি পুলিশ ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানোর পর পরিবার একটি সাধারণ ডায়েরী করতে চাইলেও তা করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবারটি।
সরকার পতনের পরে বিচারের আশায় গত ১ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর বিজ্ঞ আমলি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিহতের ছেলে মো. মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে একটি নালিশী দরখাস্ত দায়ের করেন। এরপর একইদিন আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রোমানা আফরোজ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারা মোতাবেক আদেশপ্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এফআইআর হিসেবে গণ্য করে আদালতকে অবহিত করার জন্য হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ প্রদান করেন।
নিহতের পরিবার থানা কর্তৃপক্ষ বাদে একজন উর্ধ্বতন কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা জুডিশিয়ারির তদন্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করলে মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়।
তবে এঘটনার ৮ বছর পরে মামলা হলেও, কোন অভিযুক্তকে এখন পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থেও আটক করা হয়নি। অভিযুক্ত প্রশাসনিক দায়িত্বরত সকলেই এখনও স্ব পদে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছেন। তদন্তে বাঁধাগ্রস্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুর রহমান (রিপনের) ইন্ধনে প্রশাসনের অসহযোগীমূলক আচরণসহ নিহতের পরিবার, স্বাক্ষীগণকে নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি ধামকিসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলা সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকে এলাকা ছেড়ে বাহিরে অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, এঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এঘটনার নানা তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়াও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য আসছে। আমাদের অনুসন্ধান চলমান।
মৃতঃ মো. ইদ্রিস আলী
নেপথ্যে পুলিশ কর্মকর্তার নাম: পর্ব-১
আরো বিস্তারিত পড়ুন: পুলিশের কর্মকর্তা কি আইনের উর্ধ্বে