এম আবু হেনা সাগর,
ঈদগাঁও কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী নদী দিন দিন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। এ নদীটি একদিকে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত, অন্যদিকে নদীর জমি ভূমিদুস্যদের দখলে চলে যাচ্ছে। দখল আর দূষণে পড়ায় নদীটি সংকীর্ণ হচ্ছে। দেশের পুর্বদক্ষিণ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বান্দরবান (মৈন পাহাড়) পর্বতশৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট ঈদগাঁও নদী প্রায় ৪২ কি.মি পাহাড়ি ও সমভূমি পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপ সাগরে মিলিত হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি বাইশারী,রামুর গর্জনিয়া-ঈদগড়, ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও,ইসলামাবাদ, জালালাবাদ,পোকখালী ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে মহেশখালী চ্যানেলে গিয়ে মিশেছে। এসব অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ঈদগাঁও নদীর দু’পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা, সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও সমৃদ্ধি সর্বাংশে এই নদীর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। এই দীর্ঘ পথে নদীর দুপারে তৈরী হয়েছে বিস্তীর্ণ পলি ও পলি দো-আশঁ মাটির উর্বর প্লাবণ সমভূমি। যা এই অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর কৃষিপ্রধান গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনেছে স্বনির্ভর সচ্ছলতা আর সমৃদ্ধি। এই এলাকার কৃষকরা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় রাখছে অনন্য ভূমিকা।
কালক্রমেই ঈদগাঁও জনপদের এই নদীটি নিজে মরাখালে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের মতে,বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও বাজার,ঈদগাঁও স্টেশন ও আশপাশ এলাকার পচন ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। ফলে দুষিত হচ্ছে নদীর পানি, হারিয়ে যাচ্ছে নদী প্রাণবৈচিত্র্যতা। নদীতীর ভরাট ও দখলের ফলে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে নদীর প্রশস্ততা। এতে নদীর পানিধারণ ক্ষমতা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। যা প্রতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা,নদীভাঙনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে থাকে নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও ফসলী জমি। ঈদগাঁও নদীর উত্তর পারের (কবি মুহম্মদ নূরুল সড়ক), ঈদগাহ জাহানারা বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পয়েন্টে নদীর উত্তর পারে বর্জ্যের স্তুপ। যার মধ্যে অধিকাংশই অপচনশীল পলিথিন ও মেডিক্যাল বর্জ্য।
স্থানীয়রা আরো জানান, প্রায়শ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আধাঁরে ওই নদীর বাশঁঘাটা সেতু ও বাসস্টেশন সেতু পয়েন্ট দিয়ে ফেলছে মুরগী খামারের বর্জ্য,ফল ও তরকারী বর্জ্য, মাছ ও মুরগী কাটা উচ্ছিষ্ট বর্জ্য, হোটেল রেস্তোরাঁর বর্জ্য’সহ গৃহাস্তালি বর্জ্য। নদীতীরে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মানববর্জ্যে পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক, নাসির উদ্দীনসহ অনেকে জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে একাধিক স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর বাস্তসংস্থান ধ্বংস হচ্ছে। নদীর অভ্যন্তরে তৈরী হচ্ছে গভীর খাদ। এতে ঈদগাঁও নদী প্রতিবেশ সংকটের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে।
মানুষের জীবন ও জীবিকা, কৃষি, যোগাযোগ ও অর্থনীতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত নদীটি অস্তিত্ব আজ বিলীন হওয়ার পথে। ঈদগাঁওর ঐতিহ্যেবাহী এই নদীটি রক্ষা করায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন সচেতন মহল।