মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে রামু থানাধীন ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নস্থ অফিসের চর সিকদারপাড়া থেকে আপন চাচার হাতে অপহরণের শিকার শিশু আফিয়া জান্নাত আরোয়া’কে মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কক্সবাজার সদরের লিংক রোড এলাকা হতে উদ্ধারসহ দুই অপহরণকারী র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
১। র্যাব-১৫, কক্সবাজার দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাই, বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত/গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার এবং মাদকসহ সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
২। র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর আভিযানিক দল জানতে পারে যে, গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে কক্সবাজারের রামু থানাধীন ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর সিকদারপাড়া এলাকাস্থ এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা গেইটের সামনে থেকে আফিয়া জান্নাত আরোয়া (০৮) নামে একটি শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। ভিকটিম আফিয়া জান্নাত আরোয়া কক্সবাজারের রামু থানাধীন ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ অফিসের চর সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল হকের মেয়ে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম আফিয়া জান্নাত আরোয়া রামু ফতেখাঁরকুল অফিসের চর সিকদারপাড়া অছি উদ্দিন জামাদার নূরানী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.২০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে এমদাদুল উলুম মাদরাসা গেইটের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা অজ্ঞাত অপহরণকারী চক্র তার পথরোধ করে জোরপূর্বক তাকে সিএনজি যোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বিষয়টি ভিকটিমের পরিবার জানতে পেরে অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের লক্ষে উক্ত ঘটনাস্থল এবং তার আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করেন। পরবর্তীতে ঐদিন অনুমান ১১.০০ ঘটিকার দিকে ভিকটিমের মায়ের মোবাইল নম্বরে কল করে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা মুক্তিপণ দাবীসহ তাদের দাবী মত মুক্তিপণের টাকা না দিলে অপহৃত শিশুটিকে মানব পাচারকারীর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দিবে অথবা খুন করে লাশ গুম করে ফেলা হবে মর্মে হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে কক্সবাজারের রামু থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০২০) এর ৭/৮/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং ৩২, তাং ১২/১১/২০২৪।
৩। অপহৃত শিশু ভিকটিম আফিয়া জান্নাত আরোয়া’কে উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষে র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয়ে গত ১২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ অনুমান ১৭.৩০ ঘটিকার সময় র্যাব-১৫, সদর কোম্পানীর একটি চৌকস আভিযানিক দল কক্সবাজার সদর থানার লিংক রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুইজন অপহরণকারীকে গ্রেফতারসহ তাদের হেফাজত হতে অপহৃত শিশু আফিয়া জান্নাত আরোয়া (০৮) কে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও অপহরণকারীদের নিকট থেকে ৩টি মোবাইল, ০১টি হাত ঘড়ি, ০১টি এটিএম কার্ড এবং নগদ ৯,০০০/- (নয় হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়।
৪। গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত পরিচয়-
(১) হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম (২৩), পিতা-মোঃ নুরুল আবছার, অফিসের চর, সিকদার পাড়া, ২নং ওয়ার্ড এবং
(২) মোঃ শাহীন (২৫), পিতা-আব্দুস ছোবহান, সাং-পূর্ব দ্বীপ ফতেখাঁরকুল, ১নং ওয়ার্ড, উভয়ের ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার।
৫। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দু’জন বন্ধু এবং গ্রেফতারকৃত হাসনাইনুল হক প্রকাশ নাঈম ভিকটিম আফিয়া জান্নাত আরোয়া’র আপন চাচা। গ্রেফতারকৃত নাঈম বিদেশ যাওয়ার জন্য পরিবারের কাছে টাকা চাইলে বাসা থেকে টাকা না দেয়ায় সে তার বন্ধু গ্রেফতারকৃত শাহীন’কে নিয়ে তারই আপন ভাতিজিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে বর্ণিত ঘটনাস্থল হতে সিএনজিতে তুলে ঈদগাঁও এর দিকে নিয়ে যায়। চতুরতার কৌশল অবলম্বন করে তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ঈদগাঁও থেকে চৌফলদন্ডি এবং চৌফলদন্ডি থেকে কুতুপালং এ নিয়ে যায় ভিকটিমকে।
তারপর সেখানে গ্রেফতারকৃত শাহীনের এক চাচার বাসায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারে কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুক্তিপণ দাবী করে। এছাড়া ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তারা নেয় নাটকীয়তার আশ্রয়। ভিকটিমের শরীরে নকল ব্যান্ডেজ করে ছবি তুলে পাঠানো হতো পরিবারের কাছে। যাতে ভিকটিমের পরিবার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তাড়াতাড়ি তাদের চাহিদা মোতাবেক মুক্তিপণ দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে ৭০,০০০/- (সত্তর হাজার) টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পুনরায় নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষে তারা কুতুপালং থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড হয়ে কলাতলী এবং কলাতলী থেকে লিংক রোড এলাকায় আসলে র্যাবের হাতে আটক হয়।
৬। উদ্ধারকৃত ভিকটিমসহ গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে কক্সবাজার জেলার রামু থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
—-স্বাক্ষরিত—-