স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি, টেকনাফের আব্দুর রহমান বদির ম্যানেজার এবং টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ’কে ঢাকার বাসাবো এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
১। র্যাব-১৫, কক্সবাজার দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ডাকাতি, চুরি-ছিনতাই, বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত/গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার এবং মাদকসহ সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে আন্তরিকতার সহিত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
২। টেকনাফের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সম্রাট আব্দুর রহমান বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল সাবেক আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ । সংসদ সদস্য থাকাকালে আব্দুর রহমান বদি নিজের নির্বাচনী এলাকা টেকনাফকে পরিণত করেছিলেন মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বর্গরাজ্য কার্যক্রমের বিশ্বস্ত সহচর ছিল গ্রেফতারকৃত জাফর। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১,২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে আব্দুর রহমান বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফর’কে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালে আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারীরা পূনরায় জামিনে বের হয়ে জাফরের নেতৃত্বে আবার সঙ্গবদ্ধ হয়েছে এবং ইয়াবা ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে।
৩। গত ১৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি জাফর আহম্মদ । এই মামলার প্রধান আসামি ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহমান বদি ইতিপূর্বে র্যাবের হাতে আটক হলেও তার বিশ্বস্ত সহযোগী জাফর এতদিন অধরাই ছিল। র্যাব তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিল। অবশেষে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে অদ্য ০১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ রাতে ঢাকাস্থ পূর্ব বাসাবো এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-১৫ এবং র্যাব-৩ এর যৌথ আভিযানিক দল জাফর আহম্মদ (৬৭), পিতা-মৃত সুলতান আহম্মদ, সাং-উত্তর লেঙ্গুর বিল, মিঠাপানিরছড়া, টেকনাফ, কক্সবাজার (বর্তমান ঠিকান: পুরাতন পল্লানপাড়া, ২নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা)’কে র্যাবের জালে আটক করতে সমর্থ হয়।
৪। গত ৫ আগস্ট রাতে টেকনাফে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাফর এবং তার তিন ছেলের নেতৃত্বে টেকনাফের আলো শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল নাফ কুইন ও আব্দুল্লাহ ব্রাদার্স ফিলিং স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এসব ঘটনায় পৃথকভাবে তিনটি মামলার রুজু করা হয় যার সবকটিতেই জাফর আহম্মদকে আসামি করা হয়েছে।
৫। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আব্দুর রহমান বদির অপরাধ জগতের বিশ্বস্ত সহচর গ্রেফতারকৃত জাফর প্রথম জীবনে ছিলেন পান বাজারের শ্রমিক। সেখান থেকে হয়ে উঠেন শ্রমিক নেতা নামধারী দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ। এই চাঁদাবাজির অর্থে সে টেকনাফ সদরের উপজেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। এরপর থেকে তার আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর কৌশলে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কালের পরিক্রমায় জাফর নানারূপে আবির্ভূত হয়ে আব্দুর রহমান বদির বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে মাদক সাম্রাজ্য সম্প্রসারনপূর্বক অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
৬। ওয়ান ইলেভেনের সময় জাফর গ্রেফতার হলে কারাগারে আব্দুর রহমান বদির সাথে তার সব সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর সে রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান বদির সাথে যুক্ত হয়ে অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেয় এবং আব্দুর রহমান বদির সহায়তায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এরপর জেলা পরিষদ সদস্য ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরকার পতন হলে ১৯ আগস্ট দুই মাসের মাথায় স্বপদ হতে তাকে অপসারিত করা হয়। উক্ত নির্বাচনে আব্দুর রহমান বদি ও জাফরের বিরুদ্ধে ভোট ক্রয়, ভোট চুরি’সহ ব্যালট পেপার ছিনতাই এর অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আব্দুর রহমান বদি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাফর’কে নিয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন।
৭। গ্রেফতারকৃত জাফর আহম্মদের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, দুদকের মামলা সহ রয়েছে প্রায় এক ডজন মামলা। কয়েকটি মামলায় সে জামিনে থাকলেও অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। ২০২১ সালের ২১শে জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় বিপুল পরিমাণ আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এছাড়াও নাশকতার মামলায় দায়ের হওয়া নাশকতা মামলা গুলোতে এতদিন সে পলাতক এবং গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে ছিল।
৮। পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হল টেকনাফ স্থলবন্দর। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আমদানি-রপ্তানী সেবা দানকারী সিএন্ডএফ এজেন্সি গুলো আব্দুর রহমান বদির কথার বাইরে যেতে পারত না। বিশ্বস্ত সহচর জাফর’কে উস্তাদ বলে সম্বোধন করতো বদি, যার জিম্মি ছিল বন্দরের প্রতিটি ব্যবসায়ী। আব্দুর রহমান বদি ও জাফরের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এজেন্সি গুলোর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আরো জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বন্দর কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি, প্রতি ট্রাকে চাঁদা উঠানো সহ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
৯। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
———ধন্যবাদ——–