চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী কবির আহম্মদ সওদাগর হত্যা মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি মোঃ জাহেদ হাসান ফিরোজ প্রকাশ মোঃ ফিরোজ’কে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব এর সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম কবির আহম্মদ সওদাগর (৭৪) পেশায় একজন গাছ ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম জেলার বারইয়ারহাট পৌরসভাস্থ হিঙ্গুলী গাছ মার্কেটে তিনি ব্যবসা করে আসছিলেন। জনৈক কামাল উদ্দিন এবং তার অপর এক সহযোগী ফার্নিচারের ব্যবসার জন্য ভিকটিমের নিকট হতে মাসিক ৩ হাজার টাকার চুক্তিতে হিঙ্গুলী গাছ মার্কেটে একটি টিন শেডের দোকান ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে কামাল উদ্দিন ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কিছুদিন ব্যবসা পরিচালনা করার পর দোকান ভাড়া বাবদ ১৪ হাজার টাকা বাকি করে। ভিকটিম কবির আহম্মদ বকেয়া দোকান ভাড়ার টাকা পরিশোধের জন্য একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করেন এবং বকেয়া দোকান ভাড়া নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করেন। পরবর্তীতে ভিকটিম বকেয়া দোকান ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করলে কামাল উদ্দিন ও তার সহযোগীরা ভিকটিমকে হত্যার হুমকি প্রদান করে। এক পর্যায়ে গত ১০ অক্টোবর ২০২৪ইং তারিখে আনুমানিক ১৭৩০ ঘটিকায় ভিকটিম কবির আহম্মদ সওদাগর জোরারগঞ্জ থানাধীন বারইয়ারহাট পৌরসভাস্থ হিঙ্গুলী মার্কেটে নিজ দোকানে কাজ তদারকি করা অবস্থায় বকেয়া দোকান ভাড়াকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কামাল উদ্দিন এবং তার সহযোগীরা ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় ধারালো অস্ত্র চাকু, কিরিচ, রামদা দিয়ে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এবং ভিকটিমের ছেলে দিদারুল আলম ভিকটিমকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের ছেলে মোঃ দিদারুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানায় ০৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ০৭, তারিখ- ১০ অক্টোবর ২০২৪ইং, ধারা- ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৫০৬/ ৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সূত্রে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় আসামি মোঃ জাহেদ হাসান ফিরোজ চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা মডেল থানাধীন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের দুইটি আভিযানিক দল গত ৩০ অক্টোবর ২০২৪ইং তারিখে আনুমানিক ১৪১০ ঘটিকায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ জাহেদ হাসান ফিরোজ প্রকাশ মোঃ ফিরোজ, পিতা-মোঃ নুরুল ইসলাম, সাং-পূর্ব হিঙ্গুলি, থানা-জোরারগঞ্জ, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ বর্ণিত মামলায় এজাহারনামীয় পলাতক আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাকে চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।