সিলেটে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) এ চিত্র দেখা গেছে।
আকস্মিক বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছেন এ সকল উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। পানিবন্দি মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন।
এর আগে বুধবার (২৯ মে) পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদী জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আকস্মিক বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কের দুটি পয়েন্ট এবং যথাক্রমে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে বলে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলংয়ে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য এরইমধ্যে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে সে সকল এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকানসমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে জৈন্তাপুরে দ্বিতীয় দিনে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী, বড় নয়াগং ও রাংপানি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এ ছাড়া বন্যায় পরিস্থিতির খোঁজ রাখছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেল, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নং লক্ষীপুর, ২নং লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঠালবাড়ী, নলজুরী, কেন্দ্রী, থুবাং, কালিঞ্জি, লালা, তুমইর, শেওলারটুক, বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা সর্ববৃহৎ সারী, বড় নয়াগাং ও রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে।
সারী-গোয়াইন বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি নিম্নাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢল টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিম্নাঞ্চলের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে গবাদিপশু সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া সকল নদী পথে যাতায়াতকারীদের সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে।
তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমের হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এই পানি আরেকটু বৃদ্ধি পাবে তারপর নেমে যাবে। তবে যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতের মেঘালয় বা আসামে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এ জন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।