ধর্ষণের অভিযোগে জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার র্যাব-১২
বহুল আলোচিত একজন নারী জুজুৎসু ক্রীড়াবিদকে জোরপূর্বক ধর্ষনপূর্বক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামী বাংলাদেশ জুজুৎসু এ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম @নিউটন সহ ০২ জনকে রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২।
শনিবার (১৮ মে) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, একজন নারী জুজুৎসু ক্রীড়াবিদকে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম নিউটনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২। রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিউটনের বিরুদ্ধে কুংফু-কারাতে শেখানোর ছলে মেয়েদের সম্ভ্রমহানির অভিযোগে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমোটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া সচিবকে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
কমিশনের উপপরিচালক এম. রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত সুয়োমোটোর বিষয়বস্তু নিচে উল্লেখ করা হলো-
প্রতিবেদন মতে, কুংফু-কারাতে শেখানোর ছলে মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করেছেন বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিউটন। এতে রাজি না হলে মেয়েদের মারধর করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছেন। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীর গর্ভপাত করানোর মতো ভয়ংকর অভিযোগও পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অপকর্মের অসংখ্য প্রমাণ, আপত্তিকর ছবি এবং অডিও রেকর্ড পেয়েছে গণমাধ্যম।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায়, অ্যাসোসিয়েশনের অধিকাংশ ট্রেইনি নারী। আর এই নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন নিউটন। এরপর ভালো চাকরি ও বিদেশে খেলতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতনের মতো অপকর্ম করতেন অভিযুক্ত নিউটন। এমনকি অনুশীলনের আগে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের কক্ষেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী নারী খেলোয়াড় মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গ্রেপ্তারকৃত জুজুৎসু সাধারণ সম্পাদক রফিকুল প্রশিক্ষণকালীন বিভিন্ন অজুহাতে তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছেন।
পরবর্তী সময়ে একসময় মেয়েদের পোশাক পরিবর্তন কক্ষে অন্য এক নারী খেলোয়াড়ের সহায়তায় তাঁকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন। রফিকুলের সহযোগী ওই নারী খেলোয়াড় সে সময় ভুক্তভোগী নারীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। রফিকুলও সেই একই ভয় দেখিয়ে রাজধানীর একটি ফ্ল্যাটে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন।
অভিযোগ আছে, সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদসহ একাধিক নারী খেলোয়াড়কে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়িত তিনি। জুজুৎসুর আরেক নারী খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে নিউটনকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রীড়াসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর সম্ভ্রমহানি, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতনসহ অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীর গর্ভপাত করানোর মতো যে অভিযোগ বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নিউটনের বিরুদ্ধে উঠেছে, তা অত্যন্ত ঘৃণিত ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
কমিশন মনে করে, অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তির পাশাপাশি যথাযথ আইনে মামলা হওয়া আবশ্যক। অভিযোগের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আগামী ১২ জুন প্রতিবেদন দিতে বলেছে মানবাধিকার কমিশন।
আজ র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১২-এর একটি দল রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সহযোগী ওই নারী খেলোয়াড়সহ আসামি রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।