এনআইডিতে আবেদনের পাহাড়
দেশের একজন নাগরিকের নিত্যদিনের সঙ্গী জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো কাজ করতে গেলে এনআইডি’র প্রয়োজন পড়বেই। তবে এই এনআইডি নিয়েও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় একজন মানুষকে।
কোনো ভুল সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সেটার আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরেও নিষ্পত্তির মুখ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) টেবিলে এনআইডি সংশোধনের আবেদন জমা হতে হতে এখন তা পাহাড়ের মতো আকার ধারণ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি কর্মকর্তারা জানান, নাগরিকদের এনআইডি সংশোধনের আবেদন আসার পর সংশোধনের চাহিদার উপর বিবেচনা করে ‘ক, খ, গ ও ঘ’ এই চারটি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। এর মধ্যে ক- ক্যাটাগরি নিষ্পত্তি করে থাকেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, খ-ক্যাটগরি নিষ্পত্তি করে থাকেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গ-ক্যাটগরি নিষ্পত্তি করে থাকেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। ঘ-ক্যাটগরি নিষ্পত্তি করে থাকেন মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। এক্ষেত্রে কোনো আবেদন কোনো ক্যাটাগরিতে ফেলতে দেরি হলে সেটি নিয়ে কোনো কাজই করা হয় না।
এছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, নাগরিকরা আবেদনের ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজ জমা দিচ্ছেন না। এতে করে কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলে সেসব জমা দিতেও অপারগ জানান আবেদনকারীরা। ফলে আবেদন ঝুলে থাকে।
আবার কোনো এনআইডি সংশোধনে তদন্ত প্রতিবেদনের প্রয়োজন হলে নানা কারণে তা আসতে দের হয়। মূলত এসব কারণে এনআইডি সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তিতে মাসের পর মাস লেগে যায়। কোনো কোনো আবেদন বছরের পর বছর পড়ে থাকার নজিরও রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি এখন নাগরিকদের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমানিক দলিল। এজন্য সংশোধন থেকে শুরু করে নতুন নিবন্ধন সহজ করতে এ কার্যক্রম আরও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে করে যে চারটি ক্যাটাগরি আছে সেসবের পাশাপাশি আরও ফিল্ড যুক্ত হবে।
যেমন ক- ক্যাটাগরির পাশে ক-১ ক্যাটাগরি থাকবে, আবার খ-ক্যাটাগরির পাশে খ-১ ক্যাটাগরি থাকবে। এভাবে গ-ক্যাটাগরিতেও এরকম ক্যাটাগরি থাকবে। তবে ঘ-ক্যাটাগরি যেহেতু মহাপরিচালকের সেহেতু এ ক্যাটাগরিতে কোনো নতুন ফিল্ড যুক্ত হবে না।
ইতোমধ্যে সিস্টেমে এ ফিল্ডগুলো যুক্ত করা হয়েছে। এ ফিল্ডে কে বা কারা কার্যক্রম পরিচালনা করবে অথবা কীভাবে করবে সেজন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ইসির কাছে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি আবেদন অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। এগুলোর মধ্যে ক ক্যাটাগরিতে এক লাখ ৩০ হাজার ৪২৬টি, খ ক্যাটাগরিতে দুই লাখ ৫১টি, গ ক্যাটাগরিতে দুই লাখ চার হাজার ২৫৫ টি ও ঘ ক্যাটাগরিতে সাত হাজার ৬৬৫টি আবেদন পড়ে আছে। এছাড়া নয় হাজার ১১৫টি আবেদন এখনো ক্যাটাগরি করা হয়নি। সব মিলিয়ে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়নি।
এনআইডিতে সাড়ে পাঁচ লাখ সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি না হয়ে পড়ে আছে, এ বিষয়ে আপনাদের পদক্ষেপ কি— জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের নতুন মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, আমি মাত্র যোগদান করেছি। এসব কাজ দ্রুত নিষ্পত্তি করতেই এখানে যোগদান করেছি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনআইডি সংশোধনের আবেদনসমূহ ক্যাটাগরিকরণ ও দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে একজন করে সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী থানা/উপজেলা কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দশজন কর্মকর্তা, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের দশজন কর্মকর্তা, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের পাঁচজন কর্মকর্তা, স্মার্টকার্ড তথা আইডিইএ প্রকল্পের পাঁচ কর্মকর্তার অংশগ্রহণে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ২৬ মে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এতে এনআইডি সংশোধন কার্যক্রমে ধীরগতি নিয়েও আলোচনা হয়।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম এনআইডি সংশোধনে আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন৷ আর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনআইডি মহাপরিচালককে।