গত কয়েকদিনের তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সহসাই বৃষ্টি আসবে, তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। আর সে কারণে বৃষ্টি চেয়ে ইসতিসকার নামাজ শেষে অঝোরে কাঁদলেন শত শত মুসল্লি।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে কক্সবাজার সদরের ঘাটপাড়ায় খরুলিয়া নুরানী এন্ড ক্যাডেট মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা সংলগ্ন মাঠে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত এ নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই দলে দলে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা মুফতি আনোয়ারুল হক এই নামাজে ইমামতি করেন।
নামাজ শুরুর পূর্বে বয়ান করা হয়। এরপর দুই রাকাত ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ আদায় শেষে খুতবা পাঠ করা হয় ও আল্লাহর নিকট বৃষ্টি চেয়ে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। এসময় নামাজে অংশগ্রহণকারী কিশোর, বৃদ্ধ ও যুবকদের বৃষ্টির জন্য কাঁদতে থাকেন। আমিন আমিন ধ্বনিতে ভরে ওঠে নুরানীর মাঠ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসতিসকা শব্দের অর্থ পানি বা বৃষ্টি প্রার্থনা করা। সালাতুল ইসতিসকা অর্থ বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ। শরিয়ত অনুযায়ী, অনাবৃষ্টির সময় মহান আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত অনুসরণ করে খোলা প্রান্তরে নামাজ আদায় ও দোয়ার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করে থাকেন মুসলমানরা।
মুসল্লি হিসেবে উপস্থিত আব্দু জাব্বার বলেন, প্রচণ্ড তাপ। বিভিন্ন স্থানে নলকূলে পানি উঠছে না। ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। তাই বৃষ্টি চেয়ে নামাজের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে সবাই দোয়া করেছেন।
নামাজ শেষে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও নুরানী মাদ্রাসার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কায়সার উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, যে গরম পড়া শুরু হয়েছে, আল্লাহ রহমত না করলে কোনোভাবেই এই গরম কমবে না। আর সে রহমত ভিক্ষা চেয়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় করলাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দু রশিদ বলেন, এই গরমে সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আল্লাহপাক যেন গরমটা কমিয়ে রহমতের বৃষ্টি দান করেন,সেজন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করলাম।
মাওলানা মুফতি আনোয়ারুল হক বলেন, তীব্র দাবদাহে সারাদেশ আজ অতিষ্ঠ। শুধু মানুষ নয়, বিভিন্ন প্রাণিকূলও আজ সংকটে রয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছি। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য সবাই মিলে এক সাথে কেঁদেছি। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করবেন আশা করি।
ইমামদের মতে, বৃষ্টির জন্য পরপর তিনবার এই সুন্নত নামাজ আদায় করার নিয়ম রয়েছে। যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করতেন। রসুলের এই সুন্নত অনুসরণ করেই নামাজের পর দোয়া করা হয়েছে। যুগে যুগে মহান আল্লাহ নানারকম বিপদ ও দুর্যোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন। অতিরিক্ত পাপের কারণে এমন অনাবৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র হাদিসে। তবে ইনশাআল্লাহ, মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে শীঘ্রই রহমতের এই বৃষ্টি দিয়ে মানবজাতির কল্যাণ করবেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গেল সপ্তাহে এভারিজ হিসেব করলে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলিসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে কক্সবাজারে
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত