চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও থানার আলাচিত ও চাঞ্চল্যকর ১০ বছরের শিশু ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ আফছার’কে দীর্ঘ ২২ বছর পর মহানগরীর সিএনবি মোড় থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভুক্তভোগী ভিকটিম শিশু চট্টগ্রাম মহানগরীর চাদগাঁও থানাধীন কাশেম কলোনীতে পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছিল। গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০২ইং তারিখ ভিকটিম তার অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে বাসার সামনে খেলাধুলা করছিল।
এমন সময় ভিকটিমের বাসার পূর্ব দিকের খালে জনৈক আফছার নামের এক ব্যক্তি নৌকা নিয়ে আসে। ভিকটিমের সহপাঠীরা নৌকায় উঠলে নৌকার মাঝি আফছার ভিকটিমসহ তাদের নৌকায় করে বেড়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নদীতে নিয়ে যায়।
কিছু দূর যাওয়ার পর আফছার নৌকা হতে ভিকটিমের সাথে থাকা সহপাঠীদের কৌশলে নদীর পাড়ে রেখে ভিকটিম’কে নদীর পার্শ্ববর্তী নির্জন স্থানে নিয়ে দুই হাত বেঁধে জোর পূর্বক ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। ভিকটিম কান্নাকাটি করলে তাকে ২০/- দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং ঘটনাটি কাউকে বললে তাকে জবাই করে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম বাসায় ফিরে এসে ব্যাথায় কান্নাকাটি করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার কান্নাকাটির কারণ জিজ্ঞাসা করলে ভিকটিম ধর্ষণের বিস্তারিত ঘটনা পরিবারকে জানায়।
উক্ত ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর চাদগাঁও থানায় মোঃ আফছার’কে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১০, তারিখঃ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০০২, ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১)। মামলা দায়েরের পর হতে আসামি মোঃ আফছার আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আসামি মোঃ আফছার এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিজ্ঞ আদালত বিচার কার্যক্রম শেষে আসামি মোঃ আফছার’কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১০,০০০/- টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ০১ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে।
নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ আফছার আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম মহানগরীর চাঁন্দগাও থানাধীন সিএনবি মোড় এলাকায় আত্মগোপন করে আছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১৫০৫ ঘটিকার সময় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ আফছার (৫৬), পিতা-মঞ্জু মিয়া, সাং-হামিদচর, থানা-চাঁদগাঁও, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আকটকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ১০,০০০/= টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ০১ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাকত আসামি মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।