চট্টগ্রাম মহাগরীর হালিশহর এলাকার বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর দিনমজুর মাকসুদুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ হোসেন (২৭)’কে পাহাড়তলী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম মাকসুদুর রহমান চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তোষপুর এলাকার বদিউল আলমের ছেলে। গত ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী ভিকটিম মাকসুদুর রহমান জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। সে নগরীর হালিশহর থানার বি-ব্লক এলাকায় একটি ব্যাচেলর বাসায় বসবাস করে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। একই উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ হোসেন ভিকটিমের সাথে একই বাসায় বসবাস করে আসছিল। গত ১২ মার্চ ২০১৭ সালের দিবাগত রাতে মোঃ হোসেন ভুক্তভোগী ভিকটিম মাকসুদুর রহমানের মোবাইল ফোন চুরি করে পালানোর চেষ্টাকালে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে হোসেন ভিকটিম মাকসুদকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ভিকটিমের আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ভুক্তভোগী মাকসুদকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় পরদিন ভোরে মৃত্যু বরণ করে।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত মাকসুদের ভাই বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর থানার মোঃ হোসেন’কে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৪(৩)১৭, ধারা-৩০২/৩৮০ পেলাল কোড ১৮৬০। ঘটনার পর গত ১৮ এপ্রিল ২০১৭ সালে আসামি হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর হোসেন আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষে করে পুলিশ কর্তৃক গত ৩০ এপ্রিল ২০১৭ সালে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। উল্লেখ্য, মামলার বিচার চলাকালে আসামি মোঃ হোসেন বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালত গত ০৮ নভেম্বর ২০১৭ইং তারিখে মামলার একমাত্র আসামি হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন। মামলার সাক্ষীদের সাক্ষগ্রহণ, অভিযোগপত্র এবং আসামির স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞ আদালত গত ০৯ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ আসামি মোঃ হোসেন’কে মৃত্যুদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদন্ড প্রদান করে রায় ঘোষণা করেন।
মামলাটির রায় ঘোষনার পর হতে মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একমাত্র আসামি মোঃ হোসেন’কে গ্রেফতারে লক্ষ্যে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারির একপর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ হোসেন চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানাধীন কনকা এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে অদ্য ০৯ এপ্রিল ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ০০৩০ ঘটিকায় র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মোঃ হোসেন (২৭), পিতা-মৃত রফিকুল ইসলাম, সাং-রহমতপুর আদম খান বাড়ী, থানা-সন্দ্বীপ, জেলা-চট্টগ্রাম’কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে উপরোক্ত নাম ঠিকানা প্রকাশ করতঃ বর্ণিত হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।