কুখ্যাত ডাকাতি চলাকালীন পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা গ্রেফতার করেছে র্যাব
বহুল আলোচিত গাজীপুরের শ্রীপুরে কুখ্যাত আন্তঃজেলা ডাকাতদল কর্তৃক ডাকাতি চলাকালীন পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করে দুই পুলিশ সদস্য’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখমকারী মূলহোতাসহ ০৩ ডাকাত’কে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে যৌথ অভিযানে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও বেশকয়েকটি চাঞ্চল্যকর চুরি/ডাকাতির অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ০৩ মার্চ ২০২৪ তারিখ দিবাগত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ডাকাতির সময় গাজীপুরের শ্রীপুর থানার টহলরত পুলিশ সদস্যদের ডাকাত দলের সদস্যরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। উক্ত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করে; যার মামলা নং- ০৭/৯৬, তারিখ-০৫ মার্চ ২০২৪।
উক্ত ডাকাতির ঘটনা ও পুলিশ সদস্যদের উপর ডাকাত দল কর্তৃক অতর্কিত হামলার বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সহিত প্রচারিত হয়; যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত ডাকাত দলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-১ ও র্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানিক দল রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ডাকাত দলের প্রধান ১। মোঃ ইসমাইল সরদার @লিটন (৩৮), পিতা-মোঃ খলিল সরদার, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী ও তার অন্যতম সহযোগী ২। মোঃ কামরুল মিয়া (২০), পিতা-মোঃ মুসলিম মিয়া, পূর্বধলা, নেত্রকোণা, ৩। মোঃ হানিফ @মাষ্টার (৪০), পিতা- মৃত আবুল হোসেন, রাঙ্গাবালি, পটুয়াখালীদের’কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনার তাদের সম্পৃক্ততা ও পুলিশ সদস্যদের উপর হামলার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল ও তার অন্যতম সহযোগী হানিফসহ ৬/৭ জন ডাকাতির উদ্দেশ্যে গত ০৩ মার্চ ২০২৪ তারিখ দুপুরে কেরানীগঞ্জ হতে একটি পিকআপযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য গমন করে এবং শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় সন্ধ্যা হতে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক স্থান রেকি করতে থাকে।
পরবর্তীতে একই দিন মধ্যরাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের সিংগারদিঘীর হাসিখালী ব্রীজ এলাকায় রাস্তার উপর গাছের গুড়ি ফেলে দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে গণ ডাকাতি করতে থাকে।
এসময় গাজীপুরের শ্রীপুর থানা পুলিশ উক্ত ডাকাতির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার করতে গেলে তারা পুলিশ সদস্যদের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। ডাকাতরা পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রুহুল আমিন এর মাথায় এবং কনস্টেবল সেলিম মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে।
এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাত দলের এক সদস্য রুবেল চলন্ত গাড়ীর সাথে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে আহত হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ডাকাত সদস্য রুবেলের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কেরানীগঞ্জ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। এই দলের সদস্য সংখ্যা ৮/১০ জন। গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এ ডাকাত চক্রটির প্রধান এবং হানিফ তার অন্যতম সহযোগী।
তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি ও দোকান ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এছাড়াও ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে বিভিন্ন বালুর বলগেটে ডাকাতি করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন মামলায় কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা অন্যান্য আন্তঃজেলা ডাকাতদের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং সেখানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতো। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে কারাগারে থাকা ডাকাতদের কাছ থেকে রপ্তকৃত কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত ইসমাইল ১০/১২ বছর যাবৎ একটি কেমিক্যাল কোম্পানীর মালামাল রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে সরবরাহ করতো। সে ২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জ এলাকার এক ডাকাত সদস্যের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে সে ডাকাতি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে ঐ মার্কেটে কেমিক্যাল সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতো বলে জানা যায়। একপর্যায়ে সে নিজেই একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলার জন্য কেমিক্যাল সরবরাহের কাজ ছেড়ে দেয়।
কুখ্যাত ডাকাতি চলাকালীন
এসময় সে ডাকাতির কার্যক্রমে সুবিধার জন্য ছদ্মবেশে ইজি বাইক চালানো শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ ডাকাতি সংক্রান্ত ০৪টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় সে এক বছরের অধিক কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে ফরিদপুরে বেশকয়েকটি স্বর্ণের দোকান ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং সে এই মামলায় ০৭ মাস কারাভোগ করে গত মাসে জামিনে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতি কার্যক্রম করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত হানিফ @ মাস্টার গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর সাথে একই এলাকায় বসবাস করতো। সে ২০১১ সালে ডাকাতি কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয় বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর অন্যতম সহযোগী ও ডাকাতির বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ, কৌশল ও পরিকল্পনা করতো বলে জানা যায়।
ডাকাতির পরিকল্পনায় সে সিদ্ধহস্ত বলে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের নিকট তার মাস্টার উপাধি ছিল এবং সবাই তাকে মাস্টার বলে জানতো। সে ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় ০২ বছরের অধিক সময় কারাভোগ করে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত কামরুল উক্ত ডাকাত দলের একজন অন্যতম সদস্য। গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর সাথে প্রায় ৩/৪ বছর পূর্বে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় ভাড়া থাকার সময় তার পরিচয় সূত্রে সে ইসমাইলের ডাকাতি চক্রে যোগ দেয়। ডাকাতি
কার্যক্রমকে আড়াল করতে সে দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। সে গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এবং গ্রেফতারকৃত হানিফকে আগাম তথ্য দিয়ে ব্রিফিং প্রদান করতো।
এজন্য সে গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির পূর্বে পরিকল্পনা করার জন্য বিভিন্ন সময় গাজীপুর হতে জিনজিরায় গ্রেফতারকৃত ইসমাইল ও হানিফের নিকট আসতো এবং পুনরায় গাজীপুরে ফিরে গিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতো।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।