সিরাজগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন
বাংলাদেশ পুলিশ জনগনের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দেশের সংকটকালীন মূহুর্তে জনগনের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ পুলিশ কখনো পিছপা হয়না। হত্যাকান্ডসহ চাঞ্চল্যকর যেকোন ঘটনায় দ্রুত সাড়া দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার নিশ্চিতে বাংলাদেশ পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। রাজীব কুমার ভৌমিক(৩৫) এর সাথেও তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো, সম্পর্কে তার আপন ভাগিনা। ভিকটিম বিকাশ সরকার ঘটনার দিন (২৭/০১/২০২৪ খ্রিঃ শনিবার) তার ব্যক্তিগত কাজে তাড়াশ শহরের বাইরে কাটাগারি বাজার এলাকায় ছিলেন। বাসায় তার একমাত্র সন্তান তুষি রানী সরকার ও স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ছিলেন। ভিকটিম বিকাশ সরকারের ভাড়াটিয়ার মেয়ে অপির্তা সরকার এবং ভিকটিম তুষি রানী সরকার একসাথে বাসায় প্রাইভেট পরতেন। ঘটনার পরের দিন অর্পিতা ভিকটিমের বাসায় তালাবদ্ধ দেখে ফেরত আসেন। এছাড়াও ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন ফোনে ভিকটিমদের সাথে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা সত্ত্বেও না পাওয়ায় একপর্যায়ে ৩০/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাত্রি ০২.৩০ ঘটিকার দিকে স্থানীয় তাড়াশ থানায় রিপোর্ট করলে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে তালা কেটে ফ্লাটে প্রবেশ করলে গলাকাটা অবস্থায় পরিবারের তিনজনেরই মৃতদেহ দেখতে পান।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ৩০/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ভিকটিমের আত্মীয় শ্রী সুকোমল চন্দ্র সাহা(৪৫), পিতা-শ্রী সুশীল চন্দ্র সাহা, মাতা-জ্যোৎস্না রানী সাহা, সাং-বুড়ইল, থানা-নন্দীগ্রাম, জেলা-বগুড়া বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় ০১টি হত্যা মামলা রুজু করেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং আসামী গ্রেফতারে সিরাজগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে এবং নির্দেশনায় সিরাজগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব মোঃ সামিউল আলম এর নেতৃত্বে সহকারি পুলিশ সুপার, উল্লাপাড়া সার্কেল জনাব অমৃত কুমার সূত্রধর, জনাব মোঃ জুলহাজ উদ্দীন, বিপিএম, পিপিএম, ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, সিরাজগঞ্জগণদের সমন্বয়ে ২০ সদস্যের একটি চৌকস টিম গঠন করেন। চৌকস এই টিমের নিরলস পরিশ্রম এবং আন্তরিকতার কারণে হত্যাকান্ড সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যেই রহস্য উদ্ঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামী গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। এছাড়াও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়।
আলামতের বিবরণঃ
১) হত্যায় ব্যবহৃত একটি লোহার রড।
২) হত্যায় ব্যবহৃত লোহার হাসুয়া।
৩) আসামীর ব্যবহৃত মোবাইল ও
৪) আসামীর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।
ঘটনার বিবরণঃ
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক(৩৫) এবং ভিকটিমগণ পরস্পর আত্মীয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার এর বোন প্রমিলা রানীর ছেলে রাজীব কুমার ভৌমিক। হত্যাকারী তার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তার ভাগিনা রাজীর কুমার ভৌমিককে ব্যবসার পূজি হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। ব্যবসা চলমান থাকাকালীন হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছরে এসে হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিকের কাছে তার মামা ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত ৩৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার বিগত ২২/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে দাবিকৃত টাকা ৭/৮ দিনের মধ্যে ভাগিনাকে ফেরত দেয়ার জন্য অনেক চাপ দেয় এবং টাকার জন্য হত্যাকারী ও তার মা (ভিকটিমের বোন)কে ফোনে অনেক বকাবকি করে। হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে মনঃকষ্ট পাওয়ায় তার মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ফলশ্রুতিতে বিগত ২৭/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে বিকেল ১৬.৪৮ ঘটিকায় মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় আসতে চায়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তাড়াশের বাহিরে থাকায় তার ভাগিনাকে টাকা নিয়ে সরাসরি তার তাড়াশের বাসায় এসে মামীর সাথে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন। হত্যাকারী রাজীব কুমার বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে তার মামী এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকারী রাজীব কুমারকে কফি খাওয়ানোর জন্য তার মামী সন্ধ্যাকালীন পূজা শেষে বাসার নিচে দোকানে গেলে হত্যাকারী রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোনের মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মুত্যু নিশ্চিত করে। ইতোমধ্যে তার মামী কফি কিনে বাসায় প্রবেশ করলে তার মামীকেও একইভাবে রড দিয়ে মাথায় কুপিয়ে এবং গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করে। মামী এবং মামাতো বোন তুষিকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তার মামাকেও প্রথমে রড দিয়ে আঘাত করে এবং গলাকেটে হত্যা নিশ্চিতের পর লাশ টেনে বেডরুমে রেখে রুমে তালা মেরে উল্লাপাড়া ফিরে যায়। যাওয়ার পথে সে লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যায় এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখে।
গ্রেফতারকৃত আসামী নিজের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।