কক্সবাজারের চকরিয়ায় নির্বাচনপরবর্তী সময়ে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ঘটনাটি চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধের জেরে ঘটলেও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শহিদুল ইসলাম লিটন (৪৫), আবু জাফর (৫০), মো. সোহেল (৩৭), আজগর আলী (৪৫), আবুল হোসেন পাখী (৩৫), নাজমুল হোসাইন রকি (২৭), আবদুর রহিম (৪৮), জয়নাল আবেদীন (৫৫), মো. শাহিন (২৩), মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন (৪৪), প্রদীপ কুমার শীল (৪৮), মো. রিদুয়ান (৩১), আবদুল হক (৫৫), মো. কাইছার (৩৫)।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এবিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরদিন রাতে চকরিয়ার রামপুর চিংড়ি ঘের এলাকায় একদল সন্ত্রাসীর গুলিতে মোহাম্মদ হোসেন নামক একজন চিংড়ি ব্যবসায়ী মারা যান। এবিষয়ে ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আরো পড়ুন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, কুমারখালী ও খোকসা থানা এলাকায় সহিংসতায় জড়িত মোট ১৭ জন গ্রেফতার করা হয়
তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে র্যাব গোয়েন্দা নজদারি বৃদ্ধি করে এবং ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।’ গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আবু জাফর রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি এবং শহিদুল ইসলাম লিটন সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেন সমিতির সদস্য হিসেবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে চিংড়ি ঘের এলাকার ৪৮ একর জমির মধ্যে খামার ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। পাশাপাশি চিংড়ি ঘের পাহারার দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।
সমিতিটিতে ৬০০-৭০০ জন্য সদস্য রয়েছে। সাহারবিলের রামপুর মৌজায় সমিতির মালিকানাধীন ৫১১২ একরের বিশাল চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঘের সমিতির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নিয়ন্ত্রণে না থাকা এসব ঘের দখলে নিতে গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে গ্রেপ্তারকৃত লিটনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি চিংড়ি ঘের এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয় এবং কয়েকশ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
আরো পড়ুন
মোহাম্মদ হোসেন কে গুলি করে হত্যার গ্রেপ্তার ১৪ জন
[caption id="attachment_16854" align="alignnone" width="297"] মোহাম্মদ হোসেন কে গুলি করে হত্যার গ্রেপ্তার ১৪ জন[/caption]
আরো পড়ুন
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানা এলাকা হতে ০২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
মোহাম্মদ হোসেন কে গুলি করে হত্যার গ্রেপ্তার ১৪ জন
যেভাবে হত্যা
গ্রেপ্তারকৃতরা র্যাবকে জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী আবু জাফর ও লিটন অস্ত্রধারী হিসেবে সোহেল, আজগর আলী, আবুল হোসেন পাখী, নাজমুল হোসাইন রকি ও আবদুর রহিমকে গুলিবর্ষণের দায়িত্ব দেন। লিটনের নির্দেশে মোবাইলে ফোন করে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে চিংড়ি ঘের এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে ভিকটিম হোসেন দুপুরের পর বাড়ি ফিরতে চাইলে লিটন ও তার সহযোগীরা রাতে মিটিং আছে জানিয়ে তাকে ফাঁকা জায়গায় নির্মিত ঘরে কৌশলে আটকে রেখে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান।
ঘেরের পাশে লবন চাষের খালি জমিতে নিয়ে গিয়ে লিটন অস্ত্রধারী সোহেল ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে একনলা বন্দুক দিয়ে ভিকটিম মোহাম্মদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেন। এর পর গ্রেপ্তাকৃতরা হত্যার ঘটনাটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালান ও হত্যাকারীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করতে থাকেন।
র্যাব বলছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তার, চিংড়ি ঘের দখল ও অন্তঃকোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত শহিদুল ইসলাম লিটন স্থানীয় কলেজ থেকে ডিগ্রি কোর্স সম্পন্ন করে জ্বালানি তেলের ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি ‘রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির’ সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।
র্যাবের ভাষ্য, এ চিংড়ি ঘেরে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এলাকায় ৩০-৩৫ জনের একটি অস্ত্রধারী দল গঠন করেন লিটন। এলাকায় তিনি অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় দস্যুতা, মারামারি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, অপহরণসহ সাতটির বেশি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
রহিমের নামে চকরিয়া থানায় একটি মারামারি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা আবু জাফর ও লিটনের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত