
অবৈধ পরকীয়া প্রেমের বলি শিশু সায়মন হত্যার রহস্য উদঘাটন মূল আসামী গ্রেফতার ও ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান।
গত ১৬/০৮/২০২৩খ্রিঃ তারিখ তিতাস থানার কলাকান্দি গ্রামের জনৈক খোরশেদা আক্তার (৪০), তার শিশু ছেলে সায়মন (৭) কে খুঁজে না পেয়ে প্রতিবেশী ও আতœীয় স্বজনদের জানান। তারপর সবাই মিলে এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করতঃ বিষয়টি অত্র এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার করেন। পরবর্তীতে গত ১৯/০৮/২০২৩খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১১ঃ০০ ঘটিকার সময় কড়িকান্দি ইউনিয়নের কলাকান্দি সাকিনস্থ বালুর মাঠের কাশঁ বনের ঝোপের মধ্যে স্থানীয় লোকজন শিশু সায়মন এর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়। এ সংক্রান্তে খোরশেদা আক্তার তিতাস থানার মামলা নং-১৪, তারিখ- ২০/০৮/২০২৩, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন।
উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার, কুমিল্লা মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কুমিল্লা ও তিতাস থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে স্থানীয় সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষন করে এই ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এর ফলশ্রুতিতে স্থানীয় সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এই চৌকস টিমটি এ ঘটনার সাথে জড়িত মূল ঘাতক মোঃ বিল্লাল পাঠান(৪২), পিতা- মোঃ খেলু পাঠান কে গ্রেফতারে কুমিল্লা, ঢাকা ও সুনামগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। তৎপ্রেক্ষিতে গত ৩০/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানাধীন কান্দিরপাড় এলাকা হতে সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত হত্যাকান্ডে সে এবং এই মামলার এজাহারনামীয় আসামী শেফালী আক্তার(৪২), স্বামী- জামাল মিয়া এর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে জানায় যে, শেফালী আক্তার সম্পর্কে তার জেঠস (স্ত্রীর বড় বোন) এবং শেফালীর স্বামী প্রবাসী হওয়ায় তাদের মাঝে একটা অবৈধ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক হয়। উক্ত সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন গত ১৬/০৮/২০২৩খ্রিঃ তারিখ বিকাল অনুমান ১৬ঃ৩০ ঘটিকার সময় বিল্লাল পাঠান ও শেফালী অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। তাদের এই অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ঐ বাড়িতে খেলতে যাওয়া শিশু সায়মন তাদেরকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলে। এবং সায়মন বলে যে, ‘‘দেইখা ফালাইছি হগলরে কইয়া দিমু।’’ শিশু সায়মনের এমন কথা শুনে বিল্লাল আতঙ্কিত হয়ে সায়মনের গলা ও মুখ চেপে ধরে। একই সাথে সায়মন যেনো এই কথা কাউকে জানাতে না পারে এটি নিশ্চিত করার জন্য হত্যার পরিকল্পনা করে এবং শেফালী তার ঘরে থাকা আলমারীর উপর থেকে ছুরি এনে দিলে আসামী বিল্লাল শিশু সায়মনের বুকের দুই পাশে ৩/৪টি গভীর ছুরিকাঘাত করে। অতঃপর নৃশংসতার সাথে শিশু সায়মনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর আসামী বিল্লাল ও শেফালী ঘরে থাকা প্লাষ্টিকের বস্তায় সায়মনের লাশ ঢুকিয়ে খাটের নিচে রেখে দেয়। এবং রাত অনুমান ১২ঘটিকার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশে বালুর মাঠে কাশঁবনের ঝোপের মধ্যে বস্তাবন্দী লাশ ফেলে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা প্লাষ্টিকের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপরিউক্ত আসামীদের সম্পৃক্ততার সমর্থনে আনসর আলী ও শাহ আলম নামে দুইজন ব্যাক্তি সাক্ষী হিসেবে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, আসামী শেফালী আক্তার কে গত ২০/০৮/২০২৩খ্রিঃ তারিখে ডিবির একটি চৌকস টিম কর্তৃক তিতাস থানা এলাকা হতে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ বিল্লাল পাঠান এর নামে ০২টি মারামারির মামলা আছে।
শিশু সায়মন @আরিয়ান(৭) এর লাশ পাওয়া যায় ১৯/০৮/২০২৩খ্রিঃ তারিখ।
=> মামলা নং- ১৪, তারিখ- ২০/০৮/২০২৩, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
=> মূল আসামীঃ- ১। মোঃ বিল্লাল পাঠান(৪২), ২। শেফালী আক্তার(৪২)।
=> উদ্ধারঃ- ১টি রক্তমাখা প্লাষ্টিকের বস্তা।
=> বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদানঃ-
১। শাহ আলম(৫৩) (আসামীর ফুফাতো ভাই)
২। আনসর আলী(৬৫) (আসামীর ফুফাতো ভাই)
আসামী বিল্লাল পাঠান(৪২) এর পিসি/পিআরঃ
১। কুমিল্লা এর তিতাস থানার এফআইআর নং-১০, তারিখ- ১৫ আগস্ট, ২০১৩; ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩৮৫/৩৭৯ পেনাল কোড-১৮৬০, এজাহারে অভিযুক্ত/বিবাদী
২। কুমিল্লা এর তিতাস থানার এফআইআর নং-০৮, ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৩২৩/৩৪১/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০ এজাহারে অভিযুক্ত/বিবাদী
র্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, গণ-মানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এ বাহিনী মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ইতোমধ্যে জনমনে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ দমনে র্যাব শুধু আভিযানিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইতোপূর্বে যে সকল জঙ্গি ও জলদস্যুরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছে তাদের আত্মসমর্পণ, পুনর্বাসন ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে র্যাব।
পাশাপাশি আগামী ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা রোধে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে র্যাব-ব্যাটেলিয়ন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।