কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর এম ও প্রেমাংশু বিশ্বাস
সেদিন একজন মা হাসপাতালে আমার কাছে আসলেন তার ২৪ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে। বললেন তার ছেলের ‘গ্যাসের সমস্যা’। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ছেলে কি কাজ করে? তিনি বললেন, ‘স্যার এখনো তো তেমন কিছু করে না। পড়াশুনাও করলো না, কাজকর্মেও আগ্রহ নাই।’ আমার হঠাৎ মনে হয়, ছেলেটির মায়ের কথাগুলো কেউ শুনতে চায় না বোধহয় অনেকদিন। আমি আগ্রহী হয়ে তাই আরো দু একটা প্রশ্ন করি। এরপর কথায় কথায় জানতে পারি, মহিলার নিজের রোগের কথা, আর্থিক দুরাবস্থার কথা। তাদের নিজেদের একটু জমি আছে, মহিলা নিজেই সেখানে শ্রম দেন। মাঝে মধ্যে অন্যান্য কাজও করেন, তাতে তাদের চলে যায়… একসময় তিনি বলেন, ছেলের বাবা ছেলের তিন বছর বয়সে বিদেশ গিয়েছিলেন কাজ করতে। এরপর সেখানেই বিয়েশাদি করে থেকে গেছেন। প্রথম প্রথম টাকা পয়সা পাঠালেও এরপর যোগাযোগ বন্ধ করে দেন, আর কোনদিন খোঁজখবর নেন নাই।
এতটুকু বলার পর আমাদের গল্পের মা এর গলাটা ধরে আসে, চোখ কিছুটা ভিজে যায়। তিনি তবুও বলতে থাকেন, তার বাবা বিদেশ যাওয়ার সময় পেটে তার আরো এক মেয়ে ছিল। সেই মেয়ে জন্মের পরে আর বাঁচলো না। ছেলেকে অবলম্বন করেই তিনি বেঁচে আছেন। ছেলেটির মা বলতে থাকেন, তার নিজের অসুখের জন্য তিনি বড়ি কিনতে না পারলেও ছেলেকে দুই তিন পদের গ্যাসের ওষুধ কিনে খাওয়ান। কিছুদিন আগে এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছেন, তাতে তার নিজের আর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি… আমি তাকিয়ে থাকি সেই মায়ের দিকে।
অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে বুঝতে পারি, তার ছেলের ‘গ্যাসের সমস্যা’ এমন জটিল কিছু নয়। একটু রাগত স্বরে বলতে যাচ্ছিলাম, আপনার ছেলেকে কাজ করতে শেখান, সংসারের কাজে নামলে, খাটাখাটনি শুরু করলে এসব গ্যাস এমনি কমে যাবে। কিন্তু আমার গলায় খুব বেশি জোড় হয় না এই মায়ের সামনে। মায়েদের কষ্টের বোধহয় কোন শেষ হয় না….