ড্রাইভার নিয়োগের দেড় মাসেও চুক্তিকৃত ২০ লক্ষ টাকা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। সেই ক্ষোভ প্রকাশ করা এক অডিও গত ২২ নভেম্বর বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশ হলে মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া সেই অডিওতে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো, এক মাস সময় নিয়ে ৩ তারিখের কথা বলে আজ ১৫ তারিখ অর্থাৎ দেড় মাস হয়ে গেল। কি করবে না করবে সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার টাকা দিয়ে যাও। মাগুরা আমার এক ভাই আছে ওকে দিলে ২৫ লাখ টাকা পেতাম আমি। ওই ভাই টাকা নিয়ে বসেছিল, ওই যে আমার বিপুল আছে, চেয়ে নিতে যাবো কেন আমি। এক একজন ২০ লাখ টাকা খুশি হয়ে দিত, এগুলো আমার মুখের কথা বলতে দেরি। ওর চাকরির জন্য হাবিবুরের চাকরি হলো না হাবিবুর তো আমার ভাগ্নে হয়।
হেলপারের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে চাই, এতো ড্রাইভার! ওতো গাড়ি চালাতেই পারে না, গাড়ির টায়ার পর্যন্ত চেনে না ও, বিকালে ভিতরে এসে প্রতিদিন গাড়ি চালানো শেখে, তাহলে সে লোকের তো একটা বিবেক থাকা উচিত! কয় আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। হেন-তেন সাত সতেরো, উরতো একটা বিবেক হওয়া উচিত, উচিত না?
আমি তো একদম সাইলেন্ট হয়ে আছি, তাহলে ওতো হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার করবে। ও দশ-বিশ হাজার কম দিবি আরো কম দিক আমার তো কম নীতি সমস্যা নেই, জয় জয়ের বুঝটা পেয়ে গেছে, পেয়ে যায়নি? দুইটার একটা পেয়ে গেছে! জয় আমার বললো ভাই মিলন আপনার আত্মীয় মানুষ আপনার বাড়ির পাশে, যায় হোক না হোক আপনি মিলনের সাথে বুঝে নেন গা।
জয় ওইটা থেকে আমার কিছুই দেইনি আর জয় যদি এতক্ষন না পেত তাহলে ও তো পাগলা কুত্তার মত হয়ে যেত। জয়ের কি এখন কোন জ্বালা আছে ওর তো কোন জালা নেই। ওরতা ও পুরোটাই পেয়ে গেছে, মানে সিন্ডিকেটের ৩ তারিখ ৩ তারিখ বিকালেই পেয়ে গেছে।
মানে এখন থেকে দেড় মাস হয়ে গেল দেড় মাস আগেই নিয়ে নিছে। আর মিলনেরটা আমার উপর গাঢ় উপর গড়া দিয়েছে এবার আমার আম ছালা সব ডুকেছে। এখন উর চাকরিই যদি না থাকে তাহলে তো কি করে খাবিন ও... জমির মায়া করছে এখন ও..(মিলন)!
এছাড়াও নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি ও নাছিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ইবি শাখা ছাত্রলীগের ২৪ সদস্যের একটি কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য এই কমিটির অনুমোদন দেন। তার পূর্বে বিগত কমিটির সহ সম্পাদক আরাফাতকে ২০১৬ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এর প্রায় ২ বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে, মাদক নেওয়ার অভিযোগে আটককৃত তার কয়েক অনুসারীকে পুলিশ ভ্যান থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইবি শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি করা হয় ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে।
এতসব বিতর্কের পরেও কোন এক অন্ধ শক্তির কারণে আল-নাহিয়ান খান জয় ফয়সাল সিদ্দিক আরাফাতকে সভাপতি করেন বলে দৈনিক ভোরের পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়।
গত ৩১ জুলাই সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও একক আধিপত্য ধরে রাখতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করনি আরাফাত। এতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও ক্ষুব্ধ ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগেও ছাত্রলীগ এধরনের কাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এমন ছাত্রলীগ চাই না যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিতি নৈতিকতা ও ভাবমুর্তিকে বিনষ্ট করে। ছাত্রলীগের এমন কর্মকান্ডে হতাশ ও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি।
প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: আবু জাহিদ
কপিরাইট ©২০২৩-২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত