কুমারখালীতে MTFE অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে MTFE নামক এক বিদেশি অ্যাপসের খপ্পরে ফেলে হাজার হাজার যুবকের ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। এক লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করে প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার লাভ পাওয়া যাবে এমন প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হয়েছে শত শত নিরীহ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। সক্রিয় প্রতারক চক্রটি প্রথমে $ ২২০ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকা প্রায় ২৬ হাজার টাকা ও পরে আস্তে আস্তে বাড়ায়ে $ ৫২০ ডলার এমটি এফ ই অ্যাপসে ঢুকায়ে নগত টাকা নিতে থাকে প্রতারক সংঘবদ্ধ চক্রটি। আর প্রতিটি একাউন্টের রেফার হিসাবে ব্যবহার করছে প্রতারক চক্রের সদস্যদের হিসাব। এরপর থেকে গ্রাহকরা সবাই MTFE অ্যাপসে ডলার ডিপোজিট বিনিয়োগ করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে গ্রাহকরা লাভ নিতে নিতে পরে একসময় ব্যালেন্স শূন্য ও ঋণাত্মক করে এমটি এফ ই অ্যাপসের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি। গ্রাহকরা রাতে রাতে ধনী হতে গিয়ে তারা প্রতারিত হয়েছেন।
শত শত ভুক্তভোগীরা জানান, MTFE অ্যাপসের স্থানীয় টিম লিডারদের সাথে বার বার আলোচনা করেও বিনিয়োগের টাকার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো স্থানীয় টিম লিডাররা বলছে ব্যবসায় লাভ- লোকসান রয়েছে। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। আরো বেশি বেশি বিনিয়োগ করে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার জন্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়,, প্রথমে এই MTFE অ্যাপস কুমারখালীতে নিয়ে আসে পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গ্রামের মৃত আকবার আলীর ছেলে মেহেদী । পরে সহযোগী মিজান ও মাসুদ টিম লিডার (অজ্ঞাত) কুমারখালী বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ নিরীহ শত শত মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মূলত এই কুমারখালী উপজেলায় মেহেদির কথামতো টিমলিডার সেজে MTFE অ্যাপসে কাজ করতে থাকে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি। এই প্রতারক সংঘবদ্ধ চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপসে গ্রুপ খুলে শত শত গ্রাহকদের সাথে নানা রকমের তথ্য আদান-প্রদান ও কথা বার্তা আলাপ আলোচনা করে পরিচালনা করত।
চলতি বছরের শুরুতে কুমারখালী উপজেলার দয়রামপুর, ঝাউতলা, বাটিকামারা, খয়েরচারা, পাথরবাড়ীয়া, জিলাপীতোলা, তেবাড়িয়া, আগ্রাকুন্ডা,সদকী,মন্দিরপুর, তারাপুরসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটা গ্রাম -গঞ্জে এই অ্যাপস টি যুবসমাজ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঝড় তুলে। কোন কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার মোহে একের পর এক একাউন্ট খুলতে থাকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ নিরীহ মানুষেরা। কিন্তু চলতি বছরের ১৮/৮/২০২৩ইং তারিখ রোজ শুক্রবার সকাল হইতে মেহেদী, মাসুদ ও মিজানের মাধ্যমে যারা এমটিএফ ই অ্যাপসে কুমারখালীর শত শত বিনিয়োগকারীদের ব্যালেন্স শূন্য এবং ঋণাত্মক দেখাই। পরে কুমারখালী উপজেলার দায়িত্বে থাকা মেহেদী মিজান মাসুদের সাথে গ্রাহকরা যোগাযোগ করলে তারা সমাধান করার আশ্বাস দিলেও পরে তালবাহানা শুরু করে।
বর্তমানে মেহেদী কুমারখালীর বাস স্টান্ডের সিঙ্গার শোরুম এর দ্বিতীয় তলায় MTFE অ্যাপসে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পান্টি গ্রামের বেশকিছু ব্যক্তিরা জানান, আমরা MTFE অ্যাপসের সম্পর্কে জানতাম না। আমাদের সাথে এই অ্যাপসের পরিচয় করিয়ে দেয় মেহেদী। আরও এখানে বিনিয়োগ করলে কোন লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নাই বলে ও তিন মাসের মধ্যে কিছু হলে টাকার ফেরতের গ্যারান্টি ও দেয়। পরে মেহেদির মাধ্যমে আমরা ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ডলার করে ডিপোজিটে বিনিয়োগ করি।
কুমারখালীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান,, আমি গত তিন সপ্তাহ আগে মেহেদি , মাসুম ও মিজানের কথা মতো কুমারখালীর বাসস্টান্ডের সিঙ্গার শোরুম এর দ্বিতীয় তলায় একটি সেমিনারে আমাকে দাওয়াতের মাধ্যমে ডেকে নেয়। তারপর ঐ সেমিনারে আমার সাথে যারা গিয়েছিল তারাও আমার সাথে MTFE অ্যাপে নগত টাকা হাতে দিয়ে ডলারে ডিপোজিট করি। আরোও বলে তিন মাসের মধ্যে টাকা সব উঠে যাবে ও তিনমাসের মধ্যে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে ধার দেনা ও ঋণ করে আমি ও আমার চাচতো বোন, ভাইসহ প্রায় ২০ জনকে ডিপোজিট করেছি তাদের মাধ্যমে। গত দশদিন আগে থেকেই অ্যাপের বিভিন্ন রকম সমস্য দেখায়। পরে তাদের কে জানালে বলে সার্ভারের সমস্যাসহ আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা কথা বলে ও ঠিক হয়ে যাবে এই আশ্বাস ও দেয়। ১৮/৮/২০২৩ইং তারিখ রোজ শুক্রবার সকালে অ্যাপস খুললে দেখতে পাই ডিপোজিটের ডলার গুলো ঋণাত্মক ও শূন্য দেখাচ্ছে। পরে বিষয়টি ফোন করে মেহেদি কে বললে সন্ধার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে ফোন কেটে দেয়। তার পর থেকে মেহেদি ফোন নাম্বার বন্ধ রেখে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছে। আর বাকি দুই জন মাসুম ও মিজান সৌদি আরব গিয়েছে ওমরা হজ্ব করতে। তাদের দুইজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। আমি এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রদেরকে সরকারের নজরে এনে দৃষ্টান্ত মূলক বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
কুমারখালীর আরো একজন জানায়,, আমি এম টি এফ ই অ্যাপস সম্পর্কে কিছু জানি না। আমি যদিও এই অ্যাপসে এখনো সদস্য হয়নি। তবে যারা MTFE অ্যাপে উদ্বুদ্ধ হলেও আমি যেটা দেখেছি আর্থিক সমস্যা হওয়ার কারণে সদস্য হতে পারেনি। তবে আমি এখন যেটা বুঝতে পারলাম তবে এখন যারা সদস্য হয়ে হয়রানির শিকার হয়েছে এটা একটা সম্পূর্ণ প্রতারণা মূলক প্রতিষ্ঠান। যেটা কতিপয় আমাদের স্থানীয় কিছু ছেলেদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। যারা এক শ্রেনীর অসহায় দরিদ্র মানুষকে ব্যবহার করে বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে এটা বিনিয়োগ করিয়াছে এবং তিনমাসের মধ্যে টাকার কোন সমস্যা হলে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এখন এর দায়ভার তারাই নিবে। এভাবেই তারা কুমারখালী বাসস্টান্ডের সিঙ্গার শোরুম এর দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার করেছে তারা। এখন এ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে
আমাদের কুমারখালী থেকে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।তবে এ ধরনের জালিয়াতি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। আমি দৃঢ় ভাবে বলছি তা না হলে অসহায় নিরীহ মানুষ ঋণ, কর্য করে এর মধ্যে অংশ গ্রহণ করেছেন তারা এখন দিক বেদিক দিশেহারা তারা। এ জন্য আমি সরকার বলবো এ ধরণের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া উচিৎ। যাতে ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের কাজে নিজেকে নিযুক্ত না রাখতে পারে
আশু দৃষ্টি কামনা করছি।
এছাড়াও মেহেদি হোসেন সহ তাদের টিমের একাধিক সদস্যরা পুরো কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে শত শত মানুষের MTFE অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছে । উক্ত টাকা আত্নসাৎ এর বিষয়ে মেহেদির সাথে কুমারখালীর বাসস্টান্ডের সিঙ্গার শোরুমের উপর দ্বিতীয় তলায় অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করতে গিয়ে অফিস বন্ধ পাওয়া যায় ও তার নিজ ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলে বন্ধ পাই। তবে সাধারণ নিরীহ মানুষের বক্তব্যে বুঝা যায় এখনো জেলা জুড়ে MTFE অ্যাপস টিমের সদস্যদের বিচরণ রয়েছে।