ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে ছাত্র হত্যা মামলার পলাতক আসামি পেয়ার আহমেদ এবং ইকবাল হাসান প্রকাশ বিজয়’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব এর সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগণের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ০৪ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে আনুমানিক ১৩৩০ ঘটিকায় ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে স্থানীয় ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির পালন করছিল।
উক্ত কর্মসূচিতে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ছাত্র জনতার সাথে ফেনীর ছাগলনাইয়া আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রী কলেজের অনার্স পড়ুয়া ভিকটিম মাহবুবুল হাসান মাসুম (২৫) অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলন চলাকালীন ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের প্ররোচনায় ও নির্দেশে অপরাপর আসামিরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এছাড়াও, আসামিরা হকি স্টিক, কিরিচ, দা ও লাঠি-সোঠা দিয়ে পিটেয়ে অনেক ছাত্রকে নিহত করে এবং ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় ভিকটিম মাহবুবুল হাসান মাসুম প্রাণ ভয়ে মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে শাহীন হোটেলের সামনে দিয়ে দৌঁড়ে পালানোর সময় অবৈধ অস্ত্রধারী আসামিরা তার মাথা, বুক ও পিঠে গুলি করে রক্তাক্ত জখম করলে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আহত ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামিরা তাদের হাতে থাকা হকি স্টিক, লাঠি-সোঠা, ধামা-কিরিচের উল্টা পিঠ দিয়ে পিটিয়ে ভিকটিমকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে পথচারী এবং ছাত্র-জনতা ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। গত ০৭ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে আনুমানিক ১৮০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম মাহবুবুল হাসান মাসুম মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় ১৬২ জন এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০২, তারিখ- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং, ধারা-১৪৭/
১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩২৬/৩০২/১১৪/৩৪, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ তৎসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ধারা ৩/৬।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি পেয়ার আহমেদ (৬০) চট্টগ্রাম মহানগরীর মধ্য হালিশহর এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৪ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১২৩০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি পেয়ার আহমেদ (৬০), পিতা-মেরাজুল হক, সাং-মটুয়া, থানা-ছাগলনাইয়া, জেলা-ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামি মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিল বলেও জানায়।
এছাড়াও, অপর একটি অভিযানে গত ০৪ নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখ আনুমানিক ১৬৩০ ঘটিকায় ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন ওলামা বাজার এলাকা হতে উক্ত মামলার সন্ধিগ্ধ পলাতক আসামি ইকবাল হাসান প্রকাশ বিজয় (২৬), পিতা- আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাং- চর চান্দিয়া, থানা- সোনাগাজী, জেলা- ফেনী’কে গ্রেফতার করা হয়। উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে তাদেরকে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।