আমার বাবা কি এখনো ন্যায় বিচার পাবেনা???? মোঃ সুমন আলী,,,,নিজস্ব প্রতিনিধি,,,মজলুম জননেতা আমাদের প্রিয় রাহবার খাস মথুরাপুর পিপলস ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মরহুম নূর-কুতুবুল আলম এর একমাত্র পুত্র অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তাসনিম আলম এর ফেসবুক আই ডি থেকে সংগৃহীতঃ 🌠🌈
তার অভিব্যক্তিঃ
***আমার বাবা কি এখন ন্যায়বিচার পাবে?***
আমার বাবা অধ্যক্ষ মোঃ নূর কুতুব উল আলম একজন সৎ, যোগ্য দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন তিনি খাস মথুরাপুর পিপলস ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সদ্য বিদায়ী জালিম সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়, অপমান অপদস্ত করা হয়, লাঞ্ছিত করা হয়, তার নামে মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দেয়া হয় এবং তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়।
আমার বাবার একমাত্র অপরাধ ছিল তিনি অত্যন্ত সৎ আপসহীন এবং নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন তার আরও একটা পরিচয় ছিল।তিনি কুষ্টিয়া-১ আসন দৌলতপুর থানা আমির ছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার জন্য আমার আব্বাকে চাকরিচ্যুত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আমার বাবা কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার প্রাগপুরের পাশ্ববর্তী বিলগাথুয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন এবং সেখানে বেড়ে ওঠেন। তিনি ভেড়ামারা হাই স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে বিএসসি অনার্স কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন তিনি ছাত্রশিবিরের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং ছাত্রশিবিরের আদর্শ দেখে অনুপ্রাণিত হন এবং ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত ধার্মিক, সৎ ছিলেন এবং স্বপ্ন দেখতেন সমাজ, দেশ হবে ঘুষ, সুদ ও দুর্নীতিমুক্ত যেখানে থাকবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সমতা, সাম্য ও সুশাসন। তাই সে খুঁজতে থাকে একটি প্লাটফর্ম যেখানে সে তার চিন্তাধারা, আর্দশ এবং স্বপ্নের সমন্বয় করতে পারবে। ছাত্রশিবিরের ভিতরে তিনি এগুলোর সমন্বয় খুঁজে পান যা অন্য কোন সংগঠনের ভিতর খুঁজে পাননি তৎকালীন সময় জাসদ, ছাত্র ইউনিয়নের বা বাম দলের অত্যন্ত প্রভাব ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে। তিনি হলের দায়িত্বশীল ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি অনার্স এবং এমএসসি পাশ করে গ্রামে এসে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে কুষ্টিয়া-১ আসন দৌলতপুর থানা আমির নির্বাচিত হন। কুষ্টিয়া-১ আসন দৌলতপুর থানা আমির হিসেবে তিনি তিনবার এমপি ইলেকশন করেন যদিও তিনি জয় লাভ করতে পারেননি তবুও তার জনসমর্থন ছিল এবং দৌলতপুরবাসী তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, ন্যায়পরায়ণ এবং যোগ্য মানুষ হিসেবে জানতেন।
জুলুমবাজ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আমার বাবা অনেক রাতে বাসায় থাকতে পারতেন না তাকে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় এবং আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাসায় রাতে থাকতে হতো শেষ পর্যন্ত তাকে জেলে যেতে হয় এবং বেশ কিছুদিন সেখানে থাকতে হয়।
আব্বা যখন চাকরিচ্যুত হন তখন আমরা ছয় ভাই বোন লেখাপড়া করি আমি ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ ইয়ারে পড়ি আমার পড়ালেখাও শেষ হয়নি ওই সময়ে আমাদের বেশ কিছু দিন আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। আমরা পারিবারিকভাবেই সমৃদ্ধশীল ছিলাম তবুও আমার আব্বাকে তার জীবনমান কমিয়ে আনতে হয়েছিল আমাদেরও জীবনমান কমিয়ে আনতে হয়েছিল আমাদেরও কষ্ট করতে হয়েছিল।
চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আমার বাবা একটি মামলা দায়ের করে কলেজের নামে এই বলে যে তাকে অবৈধভাবে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার সমস্ত সুযোগ সুবিধা বন্ধ করা হয় তাকে কোনো ধরনের অবসর ভাতা দেয়া হয়নি। দুর্ভাগ্য আর আফসোসের বিষয় হলো এই যে, সেই মামলা এখনো চলতেছে যদিও আমার বাবা আজ থেকে পাঁচ বছর আগে গত হয়েছেন।
আমার আব্বা ছিলেন সদা সত্য এবং সুন্দরের পক্ষে, ক্ষমতাসীন কুষ্টিয়া এক আসনের এমপি তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চেয়েছিলেন যে মামলা তার পক্ষে নেয়ার জন্য কিন্তু আব্বা তাকে এক টাকাও ঘুষ দেননি এবং তিনি বলেছিলেন ন্যায়ের পথে থেকে যদি মামলা জিততে পারি জিতব আর না হলে সব বিচার আল্লাহর কাছে দিব।
আমরা আশা করছি সরকার পরিবর্তন হয়েছে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে আমার আব্বা ন্যায় বিচার পাবে তার আত্মা শান্তি পাবে। আমরা অতীততে লড়াই করেছি এখনো লড়াই করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে লড়াই করে যাবো ইনশাআল্লাহ সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
আজকে বেঁচে থাকলে হয়তো আমার বাবা খুবই খুশি হতেন সরকার পরিবর্তন হয়েছে সুদিন এসেছে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে সবার জন্য সাম্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে এদেশে। কিন্তু আল্লাহ তাকে সেই সময় দেননি আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছেন। আমরা আশায় আছি আমরা ন্যায় বিচার পাব আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
কৃতজ্ঞতা: দুর্নীতি দমন কমিশনে আমার আব্বার মামলাটা দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং দৌলতপুর থানার এক ইন্সপেক্টর এসেছিলেন আমাদের বাসায় তার সাথে কথা বলতে সেই সময় আমার আব্বা বলেছিলেন যে আমি সৎ মানুষ আমি মজলুম আমি কোন অন্যায় করিনি আমি কোন টাকা পয়সা দিতে রাজি না আপনারা যা পারেন তাই করেন প্রয়োজনে আমাকে জেলে নেন মেরে ফেলেন। ওই সময় আমার বন্ধু দিপু বর্তমানে যে পুলিশের এডিশনাল এসপি সে এবং আরো কিছু পরিচিত জন ওই পুলিশ ইন্সপেক্টর কে ফোন দিয়ে বলেন যে আমার বাবা নির্দোষ এটা একটা রাজনৈতিক মামলা তার বিরুদ্ধে খারাপ রিপোর্ট করবেন না। পরিশেষে বাধ্য হয়ে একটু ভালো রিপোর্ট করেন যেটা পরবর্তীতে মামলার বেশ কাজে লাগে। আমি আমার বন্ধু দিপু এবং আমার পরিচিত জন এবং আমার আত্মীয় যারা আমাকে হেল্প করেছিলেন তাদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।
বাবার একমাত্র ছেলে,
মোঃ তাসনিম আলম
পাবলিক সার্ভিস অফিসার
কুইন্সল্যান্ড গভর্মেন্ট
অস্ট্রেলিয়া
ঠিকানাঃ অস্থায়ী কার্যালয়ঃ হাউজিং নং – ১১১ (নিচ তলা), রোড নং-১১, ই-ব্লক, ইাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
কপিরাইট © ২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত