মোঃ সুমন আলী
স্টাফ রিপোর্টাস
আগামী ১৭/০৭/২০২৪ ইং তারিখ পবিত্র আশুরা দিবস,আশুরা দিবসের গুরুত্ত, করনীয় ও শিক্ষনীয় সম্পর্কে বানী দিয়েছেন, মাওলানা মোঃ আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের( হাদী),, আল কুরআন এন্ড ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া,,,,,,, আরবী সনের প্রথম মাস মহরম। আর মহরম মাসের ১০ তারিখ আশুরা।মুসলমানদের কাছে আশুরা অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই এ দিনটি ছিল পবিত্র ও সম্মানিত। প্রাচীন আরবের রীতিতে যে মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম ছিল তন্মধ্যে মহররম অন্যতম। আল্লাহ নিজেই এ মাসকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ বলে ঘোষণা করেছেন। ‘মহররম’ শব্দের অর্থও সম্মানিত। আমরা অনেকেই আশুরার মূল বিষয়বস্তু কারবালা মনে করে থাকি, কিন্তু কারবালার ঘটনা আশুরার মূল বিষয়বস্তু নয়। আশুরার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে এই দিনে ফেরাউনের কবল থেকে মুসা আঃ মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনের দলকে শাস্তি দিয়েছিলেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মুসা আঃ এর বিজয়ের কারণেই মূলত শুকরিয়া সরূপ রোজা রেখে থাকে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের মুক্তি দিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮) আশুরার রোজার রয়েছে বিশেষ ফযীলত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে এই রোজার ওসিলায় আল্লাহ তাআলা রোজাদারের বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১১৬২)
রমজানের পর সবচেয়ে ফজিলতের রোজা হলো আশুরার রোজা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। এখন তা নফল। তবে ফজিলতের দিক থেকে এই রোজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি নবীজিকে রমজান ও আশুরার মতো গুরুত্ব দিয়ে অন্য কোনো রোজা রাখতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১/২১৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজাসহ ৪ টি কাজ কখনোই ছাড়তেন না উম্মুল মুমেনীন হজরত হাফসা (রা.) বলেন, নবীজি কখনো চারটি আমল ছাড়তেন না। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতিমাসের তিনটি রোজা এবং ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৬৩৩৯)
আশুরার রোজা সম্পর্কে নবীজি বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পরে সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)
এক ব্যক্তি হজরত আলীর (রা.) কাছে জানতে চাইলেন যে, রমজানের পর আর কোন মাসে আপনি রোজা রাখার আদেশ করেন? হজরত আলী (রা.) বললেন, আমার সামনে একজন সাহাবী প্রিয় নবীজিকে এই প্রশ্নই করেছিলেন। তখন নবীজি বলেছিলেন ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহাররম মাসে রাখ। কারণ এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১/১৫৭)
আশুরার রোজা কয়টি? হাদিসে পাকেই আছে এর পরিষ্কার উত্তর। নবীজি ইরশাদ করেন, তোমরা আশুরার দিন এবং আশুরার আগের দিন কিংবা পরের দিন আরো একটি রোজা রাখো । অর্থাৎ আশুরার রোজা দুইটি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-২১৫৪)
আমাদের দেশে এ বছর ১৭ জুলাই বুধবার পবিত্র আশুরা। তাই আশুরার রোজা রাখতে চাইলে ১৭ জুলাই বুধবার এবং এর আগের দিন অথবা পরেরদিনসহ মোট দুইটি রোজা রাখতে পারেন। আল্লাহ আমাদের আশুরার প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে ইসলাম মানাকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন।
ঠিকানাঃ অস্থায়ী কার্যালয়ঃ হাউজিং নং – ১১১ (নিচ তলা), রোড নং-১১, ই-ব্লক, ইাউজিং এস্টেট, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
কপিরাইট © ২০২৪ নবদেশ ২৪ মিডিয়া লিমিটেড | সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত