নাগরপুর (টাঙ্গাইল) : সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
সম্প্রতি আসন্ন এ নির্বাচন ঘিরে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সহোদর ভাই মজিবুল ইসলাম পান্না কর্তৃক উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) প্রার্থীদেরকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা এবং নব গঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও সাধারণ শিক্ষকদের সাথে নিজ বাড়িতে মতবিনিময়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন চায়ের দোকানগুলোতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে
অন্যান্য প্রার্থীগণ আঙ্গুল তুলছেন খোদ সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর দিকে।
ইতিমধ্যে ৩ প্রার্থীর সমর্থনে প্যানেল ঘোষণা করা, শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করা, প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটানোসহ নানা কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব বিষয়ে গত শনিবার (১৮ মে) সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আনারস প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা (বাতেন বাহিনীর প্রধান) খন্দকার আবদুল বাতেন সাহেবের কনিষ্ট পুত্র ব্যারিস্টার খন্দকার সালমান শামস জিৎ।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে প্রতিদ্বন্দী চেয়ারম্যান প্রার্থী নাগরপুর ইউনিয়ন বিএনপির বহিস্কৃত সদস্য আব্দুস সামাদ দুলাল (ঘোড়া মার্কা) নির্বাচনের দিন জোড়পূর্বক ভোট ছিনতাই করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার পরিকল্পনা করছেন। তার পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর ভাই মজিবুল ইসলাম পান্না প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন যে, নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রসমূহ দখল করে জোড়পূর্বক ভোট ছিনতাই করবেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ফলাফল পরিবর্তন করে ঘোড়া প্রতীকের জয় নিশ্চিত করবেন। এই উদ্দ্যেশ্যে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে আব্দুস সামাদ দুলাল, ঠান্ডু মিয়া ও জরিনা বেগম কে নিয়ে প্যানেল ঘোষণা করেছেন যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মজিবুল ইসলাম পান্না ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এই প্যানেলের বাহিরে অন্য প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নিয়োজিত কর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। নেতাকর্মীদের হিট লিস্ট তৈরী করে তাদের পুলিশি হয়রানি করা ও মামলা দেবার হুমকি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এছাড়াও তিনি হুমকি দিচ্ছেন, তার ঘোষিত প্যানেল এক ভোট পেলেও জোর করে প্রশাসনের সহায়তায় নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
মোটরসাইকেল প্রতীকে অপর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে জানান , উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী সমর্থন করে প্যানেল ঘোষণা করা, এটা ভালো লক্ষণ নয়। নির্বাচন হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকেই ভোট দিবে। এইভাবে তিনটি পদে তিন জনকে সমর্থন ঘোষণা করা মোটেও কাম্য নয়। সাধারণ জনগণ এটি গ্রহণ করে নাই বিধায় এখন সর্বত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে স্বতঃস্ফূর্ত ভোটারের সাড়া মিলছে না, মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। জনসাধারণ মনে করছে, তারা ভোট কেন্দ্রে না গেলেও তাদের ভোট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে হাঁস প্রতীকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়াসমিন আক্তার জোৎস্না জানান, আচরণবিধি ভঙ্গ করে কিছু প্রার্থী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর ছবি পোস্টারে ব্যবহার করেছে এবং মাইকিং রেকর্ডেও তাদের নাম দিয়ে প্রচার করছে। এছাড়াও প্রতিমন্ত্রীর ভাই মজিবুল ইসলাম পান্না সকল নেতাকর্মী ও শিক্ষকদের বাসায় ডেকে বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে তিন জন প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে প্যানেল ঘোষণা করেছে এবং বলেছে প্রতিমন্ত্রী ও আমার সমর্থনের এই তিন জন প্রার্থীকে যেকোনো মূল্যে বিজয়ী করতে হবে। সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ভোটের ফলাফল নিয়ে শঙ্কায় আছি, আমরা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন চাচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে নির্বাচন সংশ্লিষ্টগণদের অবগত করেছি। সকল প্রমাণসহ অচিরেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।
এ বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সহোদর মুজিবুল ইসলাম পান্না মুঠোফোনে জানান , আমি একজন অরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও অত্র এলাকার সাধারণ ভোটার। ভোটার হিসেবে আমার পছন্দ বা মতামত আমার যারা শুভাকাঙ্কী ও স্বজন রয়েছেন তাদের কাছে প্রকাশ করছি মাত্র। আমার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে যে অভিযোগ এসেছে তা সত্য নয়। আমার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চয়ই রয়েছে। নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়। কয়েকদিন আগে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল শিক্ষকবৃন্দ আমার বাড়িতে এসেছিলেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। আমি তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনগুলোতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি। এসব বিষয় নিয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা রয়েছে এবং আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট প্রয়োগেরও অধিকার রয়েছে। নির্বাচনের দিন আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো, ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ আরশেদ আলী বলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত লিখিত অভিযোগ সমন্ধে আমার জানা নেই। এরকম অভিযোগের কথা আমি মাত্র জানলাম। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার মহোদয় কর্তৃক কোন নির্দেশনা নাগরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে আসে নাই। নির্দশনা পেলে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণমাধ্যমকে জানিয়ে রাখি,
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করতে বদ্ধ পরিকর।