
স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কুমারখালীর আইউব আলীর পাশে আর্ণ এন লিভ
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কেশবপুর – লালন বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ আইউব আলী। ৭০ বছর বয়সের অসহায়-হতদরিদ্র এক বৃদ্ধ। এক সময় সে কুলি-মজুরের কাজ করত কুমারখালী শহরের কাপুড়িয়া হাটে। বয়সের ভারে শরীরের শক্তি-সামর্থ কমে যাওয়ায় ৪০ বছরের সেই পেশা থেকে বাদ দিয়েছে সর্দার। বেকার অসহায় আইউব আলী। গ্রামের চাষীদের শাক-সবজি তুলে দিয়ে যা পাচ্ছিল তাতেই চলছিল পেটের চাহিদা। বৃদ্ধা স্ত্রীও তার কাজে সাহায্য করতো সুযোগ মত। এরই মাঝে একদিন মসজিদ থেকে ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয় আইউব আলী। যেখানে চাল কেনার অর্থ নেই, সেখানে চিকিৎসা করার টাকা কোথায়? দীর্ঘ তিন মাস ঘরের কোনে খেয়ে না খেয়ে চরম অসহায় ভাবে জীবন চলছিলো। স্ত্রীর অন্যের বাড়ী থেকে ঝি এর কাজ করা আর ২/৪জন প্রতিবেশীর সাহায্যে জীবন বেঁচে ছিলো কষ্টের মাঝে। ভিক্ষাকে ঘৃনা করা আইউব আলী মনে শাহস নিয়ে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিলো। নবনির্মিত কুমারখালী-যদুবয়রা গড়াই সেতুর পাশে রাস্তার ধারে ঘরের বেড়া খুলে নিয়ে যেয়ে চালা তুললো । ভাঙ্গা টেবিলের উপর পান সুপারী রাখলো, স্ত্রীও মাঝে মধ্যে সাহায্য করে তাকে। সারাদিন এক-দেড় শত টাকা বিক্রি হয়। এই সামান্য কেনাবেচায় তো আর জীবন সংসার চলেনা। অন্য কিছু করার মত ইচ্ছে থাকলেও অর্থ-সামর্থ নেই বৃদ্ধ দম্পতির। কুমারখালীর নতুন বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হওয়া সেই সেতুতে ঘুরতে এসে আইউব আলীর অসহায়ত্বের বিষয়টি দেখতে পান আর্ণ এন লিভ‘র সদস্য মাহমুদ শরীফ। তিনি অসহায় পরিবারটির খোঁজ-খবর নেন। তাকে সহায়তার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন এই সমাজকর্মী। বিষয়টি জানানো হয় আর্ণ এন লিভ‘র চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফরিদা ইয়াসমিন জেসি আপাকে। তিনি অসহায় দম্পতিকে স্বাবলম্বী করার জন্য আর্থিক সহায়তা করার আশ্বাস দেন। আর্ণ এন লিভ‘র স্থানীয় সদস্যরা অসহায় পরিবারটির সাথে কথা বলেন। তারা কীভাবে ও কী ব্যবসা করতে আগ্রহী সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসা করার জন্য প্রায় ছয় হাজার টাকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ব্যবস্থা করে আর্ণ এন লিভ। শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে ব্যবসা করার জিনিসপত্রগুলো কিনে এনে পৌছে দেয়া হয়। এসময় আর্ন এন লিভ’ কুষ্টিয়া টিমের সদস্য মাহমুদ শরীফ, সোহাগ মাহমুদ, মোমিনুল ইসলাম ডালিম, প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। অসহায় স্বামী-স্ত্রী চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, ডিম সেদ্ধ আর চা বিক্রির দোকান দিয়েছে। এতে তাদের খুশীর সীমা নেই। জিনিসপত্রগুলো পৌছে দেওয়ার সময় আনন্দে চোখের পানি পড়তেও দেখা গেছে। স্নিগ্ধ নির্মল অকৃত্রিম হাসি এখন অসহায় আইউব দম্পতির চোখমুখে। শেষ বয়সে নতুন ভাবে জীবনের নবস্বপ্ন বুনন করছে তারা। বিকেল হলেই দোকানে মুখোরোচক খাবার নিয়ে পসরা সাজাচ্ছে আইউব আলী ও তার স্ত্রী। ঢেঁকিছাটা আতপ চাউলের গুড়া দিয়ে তৈরি চিতই পিঠার গন্ধ ছড়াচ্ছে। কচু শাক ঘন্ট, শরিষা বাঁটা, শুটকি ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা গরম গরম গলোধকন করছে ভোজনরসিক ক্রেতারা। মানবতার কল্যানে সদা জাগ্রত আর্ন এন লিভকে আইউব আলী ও তার স্ত্রী প্রান খুলে দোয়া করেছে। এব্যাপারে আর্ন এন লিভ’ চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন জেসি জানান, তাদের এই দোয়া এবং ভালোবাসাই আমাদের পাথেয়। এই কল্যানধর্মী কাজটি পরকালে নাজাতের উছিলা হোক এটাই আর্ন এন লিভ’র প্রত্যাশা।