সংবাদ প্রকাশের জেরে
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে থানায় এনে মামলায় গ্রেফতার দেখানো ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ।
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে বাসা থেকে থানায় ধরে নিয়ে এসে অভিযোগ তৈরি করে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর ঘটনায় রংপুরের তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া মো. ইফতেখায়ের আলম।
এ ঘটনার খবর প্রকাশিত হলে রংপুরসহ সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। জানা গেছে, বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর অবশেষে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে দিনাজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ তুলে ধরে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি ২০১৪ সাল থেকে দৈনিক সংবাদের তারাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান এর আগেও এই থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার দ্বিতীয় দফায় সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি যৌতুকের একটি মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি বানিয়াপাড়া গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে মমদেল হোসেন। রায়ের পর থেকেই তিনি পলাতক। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও আসামিকে গ্রেফতার না করায় ওই যৌতুক মামলার বাদী রংপুরের পুলিশ সুপারের কাছে ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৮ আগস্ট দৈনিক সংবাদে ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার না করায় ওসির বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়। এ খবর স্থানীয়ভাবে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এই সাংবাদিকের অভিযোগ, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওসি ওই যৌতুক মামলার বাদীকে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আরেকটি খবর প্রকাশ করেন তিনি। আর এ নিয়ে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের প্রতি ‘রুষ্ট হন’ ওসি।
অন্যদিকে, গত ২৪ আগস্ট রংপুর নগরীতে মানবকল্যাণ সংস্থা ও সিএসও ফোরাম যৌথভাবে আয়োজিত ‘নারী নির্যাতনবিরোধী’ কর্মশালায় বক্তব্য দেন সংবাদের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম। কর্মশালায় সাংবাদিক আশরাফুল তার বক্তৃতায় তারাগঞ্জ থানায় আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ দুটি স্থানে দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় মামলা নেয়নি তারাগঞ্জ থানা পুলিশ। এর ফলে উপজেলায় নারী নির্যাতন বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আশরাফুল ইসলামের দাবি, পরপর দুটি ঘটনায় ওসি মোস্তাফিজুর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শায়েস্তা করার পথ খুঁজছিলেন। এরই মধ্যে গত ৩০ আগস্ট জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধের ঘটনায় তার চাচাসহ ছোট ভাইদের সঙ্গে হাতাহাতি আর সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সাংবাদিকের প্রতিপক্ষ থানায় গেলে ওসি তাদের ডেকে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে রাখেন।
তিন দিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে আটক করে থানায় আনা হয়। ঘটনার দুই ঘণ্টা পর মারামারির ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলা রেকর্ড করে তাকে আদালতে চালান দেওয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া মো. ইফতে খায়ের আলমের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে। তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।