ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুছ হোসেন তালুকদার নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকায় অবশেষে তাকে বদলী করা হল। চাঁদপুরে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ও বিডি মেঘনা নিউজ ২৪ অনলাইনে তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে তা নজরে আসে স্থানীয় সরকারের।
ফলে ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার চাঁদপুর, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোঃ গোলাম জাকারিয়া’র স্বাক্ষরিত ২৮৮ নং স্বারকে অফিস আদেশের মাধ্যমে মোঃ ইউনুছ হোসেন তালুকদার’র এর বদলীর এই সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। মোঃ ইউনুছ হোসেন তালুকদার কে বর্তমান কর্মস্থল থেকে মতলব উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরে বদলী করা হয়। মোঃ ইউনুছ হোসেন ছাড়াও এই আদেশে আরো ১৪ জনকে বদলী করা হয়।
জানা যায় মোঃ ইউনুছ হোসেন তালুকদার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সাছিয়াখালী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির মরহুম লোকমান তালুকদারের সন্তান। জন্ম যেই ইউনিয়নে সেই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার জোরে স্থানীয় সরকারের ১৬ তম গ্রেডে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২০২২ সালের ২১ শে এপ্রিলে যোগদান করেন এই মোঃ ইউনুছ হোসেন তালুকদার।
চাকুরী সাথে সাথে আওয়ামী লীগের দলীয় সকল কর্মসূচী, বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তার অবস্থান ছিল সক্রিয়। ক্ষমতার জোরে কোন নিয়মের তোয়াক্কাই করত না এই ইউনুছ হোসেন। ইউনিয়ন পরিষদের সকল সুযোগ সুবিধার তালিকায় জোর পূর্বক তার পরিবারের লোকদের নাম রাখা হত। সমাজ সেবা অফিসারকে ম্যানেজ করে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রী ভাতার কার্ড করে দেওয়া কথা বলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিত এই ইউনুছ।
আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে নিজের স্ত্রী সীমা আক্তার কে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করেন, যা বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ণ।স্ত্রীকে ব্যবহার করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ইউনিয়নের নামে আসা মাতৃত্ত্বকালীন ভাতা, ভিজিডি, বিআরডিবি, একটি বাড়ি একটি খামারের সুযোগ সুবিধা গুলো নিজেরা ভোগ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এই দাম্পতী। সাইন জ্বালিয়াতি, এলজিএসপি, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি, টিআর, জি আর সকল প্রকল্পে অগ্রধিকার ছিল তার পরিবারের লোকজন ।
ইউনিয়নের পশ্চিম নজু পাটোয়ারী বাড়ির ব্রীজের গোড়া হইতে উত্তর দিকের কাঁচা রাস্তা সংস্কারের ৪০ দিনের কর্ম সূচীতে এই ইউনুছ তালুকদার তার স্ত্রী কে দিনমজুর সাজিয়ে তালিকার ২২ নাম্বারে নাম দেন, আর তার নিজের অফিসিয়াল বিকাশ মোবাইল নাম্বার তাতে ব্যবহার করেন। নিজের পরিবারের লোকজন ও বিভিন্ন নামে ক্রয় করে বিকাশ করা সিমে ৪০ দিনের কর্মসূচীর দু ধাপের টাকা উত্তোলন করতেন এই ইউনুছ।
এছাড়াও ইউনিয়ন সচিবের সাইন নকল করে চেক জ্বালিয়াতি, বিভিন্ন সেবার নামে অর্থ আদায়, ইউডিসির উদ্যোক্তাকে জিম্মি করে নিজে ইউনিয়ন পরিষদে বসেই পাসপোর্ট, এন আইডি, বিভিন্ন নিয়োগের আবেদন, জন্মনিবন্ধন করে অর্থ আদায় করে নিজে ভোগ করতেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ ইউনিয়নে ভিজিএফের ১০ কেজি চাল অসহায় ও হতদরিদ্রের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করার সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যও স্থানীয়রা ইউনুছ তালুকদার ও তার প্রবাসী ছোট ভাই হাবিব এর স্ত্রী আসমা আক্তারকে হাতে নাতে ৬ টি কার্ড সহ ধরা হয়।
অবৈধ ভাবে উপর্জানের অর্থ নিয়ে এই ইউনুছ তালুকদার গড়ে তোলেন গ্রামের মধ্যেই আলিশান বাড়ি। অথচ তার স্ত্রী সীমা আক্তার রয়েছেন ৪০ দিনের কর্মসূচীতে দিন মজুরের কাজ ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায়, পরিবারের লোকজন রয়েছে হতদরিদ্রের তালিকায়, তার মা জুলেখা বেগমের নামে রয়েছে বয়স্ক ভাতা তালিকায়।