কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কল্যানপুর চরদিয়াড় পূর্বপাড়া গ্রামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে মাদকসহ আসামিকে আটকের ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর মাদক ব্যাবসায়ী ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনকারীরা হামলা চালিয়েছে।
এতে পুলিশের তিন সদস্যকে মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে হামলাকারীরা। আহত ডিবি পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
এদিকে পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনায় গত সোমবার (১০ জুন) রাতে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১০/১২জন অজ্ঞাতকে আসামি করে মামলা করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলহাজ আলী। এসময় মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ১জনকে আসামী করে আরো ১টি মামলা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ও দৌলতপুর থানাতে কর্মরত ছিলেন, এমন সাবেক একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন, থানাতে অবৈধ তোতবির, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, জবরদখলের মাধ্যমে হাট-ঘাট দখল, ঘাট নিয়ন্ত্রনে দায়িত্বভার দেয়া নতুন সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী তৈরি করে তাদের দ্বারা সাংবাদিককে জবাই করে হত্যার হুমকিসহ নানান অপকর্মে এই পরিবারের কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। এদের এসকল অপকর্মসহ মাদক ব্যাবসার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সকল ইউনিট আইন-শৃংখলা সমুন্নত রাখতে অভিযান পরিচালনা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা, তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের কিছু সদস্যদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ নিয়ে নেতিবাচক কথা অনেক আছে। তার মধ্যে বহুল প্রচলিত প্রবাদটি হলো ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা’, তার মানে বাঘের হাতে পড়লে প্রাণ রক্ষা যত সহজ, পুলিশের হাতে পড়লে তত সহজে নিষ্কৃতি নেই। আসলে কি তাই? পুলিশ যদি এত খারাপই হবে তাহলে পুলিশের ওপর আমাদের এত নির্ভরতা কেন? কেন পৃথিবী জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের ওপর না দিয়ে অন্য কোনো সংস্থা গড়ার বিষয়টি ভাবা হয়নি?
পুলিশ কিন্তু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ, কোনো যন্ত্রবিশেষ নই। অন্য সব মানুষের মধ্যে যেসব মানবিক ত্রুুটি-দুর্বলতা আছে, পুলিশও তা মুক্ত নয়। সেটা হওয়া সম্ভবও নয়। অন্য সব পেশায় যেমন ভালো মানুষ, খারাপ মানুষ আছেন, পুলিশে তেমন থাকাই স্বাভাবিক। তবে পুলিশের কাছে আমাদের প্রত্যাশা শুধু ভালোটা। কারন,তাদের হাতে আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে আমরা নির্ভর থাকতে চাই। এখানে পান থেকে চুন খসলে আমরা হইচই বাধিয়ে পাড়া মাতিয়ে ফেলি। পুলিশের কেউ খারাপ কিছু করলে তা পাঁচ কান হতে সময় লাগে না, ভালো কাজ করলে সেটা তেমন প্রচার পায় না। দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে লেখালেখি হয়, নিন্দা-প্রতিবাদ হয়, অথচ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা কাজের ক্ষেত্রে তাদের কিছু সমস্যা আছে কি না, সেসব আমাদের জানার বাইরে। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুন রাতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার গোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় পূর্বপাড়া গ্রামে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি মাদকবিরোধী অভিযানে এমনই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে দৌলতপুর উপজেলার ক্ষমতাসীন একটি পরিবারের সদস্যরা।
তবে পুলিশের ভিতরে আমরা কেউই ঢুকতে চাইনা! কেউই জানতে চাইনা পুলিশ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হওয়া, ছুটি না পাওয়া এবং পদোন্নতিতে জটিলতা ইত্যাদি কারণে পুলিশের মধ্যে হতাশা কাজ করায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য নিজের অস্ত্রের গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ম অনুযায়ী যেসব ছুটি উপভোগ করার কথা, বিভিন্ন অজুহাতে তা থেকে অনেককেই বঞ্চিত হতে হয়। থানার দরজা যেহেতু কোনো সময় বন্ধ হয় না, সেহেতু অতিরিক্ত সময় অনেককেই ডিউটি করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করার নজিরও আছে। বড় বা উচ্চপদে যাঁরা কাজ করেন, তারা কিছুটা সুযোগ-সুবিধা বেশি পেলেও নিচের পদাধিকারীদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকের সুখ, শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে বাহিনীর ওপর ন্যস্ত, তাদের সুবিধা-অসুবিধা, মানসিক শান্তি, স্বস্তি, সুখ উপেক্ষিত হলে সমাজে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তো পড়বেই।