বিশ্বনবীর দেখানো পথ অনুসরণ করে আমল করলে সহজ হয় মহান আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জন। কোন সময়ে কি দোয়া পড়তে হবে, নিজে আমল করে তা শিখিয়ে গেছেন রাসুল (সা.), যার উল্লেখ আছে হাদিসে। সকালবেলা পড়ারও দোয়া শিখিয়েছেন তিনি।
হযতর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা ভোরে উপনীত হয়ে (ঘুম থেকে উঠে) এই দোয়া পড়বে।
দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামুতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার আদেশেই আমরা প্রভাতে উপনীত হই এবং তোমার আদেশেই আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হই, তোমার আদেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং তোমার আদেশেই আমরা মৃত্যুবরণ করি। (ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৮)
এছাড়া, বুখারি শরীফে বর্ণিত আরেকটি দোয়া আছে, যা রাসুল পাক (সা.) ঘুম থেকে উঠেই পড়তেন।
দোয়াটি হলো- আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত করার পর পুনরায় জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই সবার পুনরুত্থান। (বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)
সকাল থেকে সন্ধ্যা মহান আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করে মানুষ। এসব নিয়ামতের যথাযথ কৃতজ্ঞতা আদায় সবার কর্তব্য। একটি হাদিসে রাসুল (সা.) নিম্নের দোয়াটি পাঠের মাধ্যমে নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে বলেছেন।
দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বি মিন নিমাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালকিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা, লা শারিকা লাকা, ফালাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুকরু।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি ও আপনার অন্য কোনও সৃষ্টি যে নিয়ামত ভোগ করছি তা একমাত্র আপনার পক্ষ থেকেই। আপনার কোনও অংশীদার নেই। সুতরাং আপনারই প্রশংসা ও আপনারই কৃতজ্ঞতা।
হাদিস : আবদুল্লাহ বিন গান্নাম আল-বায়াজি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ভোরে (ঘুম থেকে) উঠে উল্লিখিত দোয়াটি পড়বে সে যেন সকালের কৃতজ্ঞতা জানাল। যে ব্যক্তি তা বিকালে পড়বে সে যেন রাতের কৃতজ্ঞতা জানাল।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৩; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং : ৮৬১)
এছাড়া ফজরের নামাজের সালাম ফেরানোর পরপর একটি দোয়া পড়তেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ আমলটি প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। কেননা মুমিন মুসলমানের জন্য হালাল রিজিক, উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমলই জীবনে একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। হাদিসের বর্ণনায় দোয়াটি এসেছে এভাবে-
হযরত উম্মু সালামাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে বলতেন-
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ ওয়া রিযকান তায়্যিবা ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান প্রার্থনা করছি, উত্তম-পবিত্র রিজিক কামনা করছি এবং কবুল হওয়ার মতো কর্ম তৎপরতা কামনা করছি।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
রাসুল (সা.) নিয়মিত ফজরের নামাজের পরপরই আল্লাহর কাছে হালাল রিজিক কামনা করতেন। এমন জ্ঞান কামনা করতেন, যাতে মানুষের উপকার হয়। আর নিজের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্যও দোয়া প্রার্থনা করতেন।
পরিশেষে, সুন্নাতের অনুসরণে জীবন-যাপন মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ। বিশ্বনবী (সা.) মানুষকে দেখিয়েছেন সেই সঠিক পথ। দিয়েছেন সুখ ও বরকতময় জীবন পাওয়ার পাথেয় ও দিকনির্দেশনা। তিনি নিজে আমল করেছেন এবং নিজের উম্মতদেরকে আমল করতে বলেছেন।