২৭ হাজারের বেশি টাওয়ার অচল, বিঘ্নিত মোবাইল সেবা
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটে। এতে গতকাল রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ২৭ হাজার ২১৮টি টাওয়ার অচল হয়ে পড়ে। ফলে উপকূলীয় জেলাগুলোর পাশাপাশি সারা দেশেই মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সেবা বিঘ্নিত হয়।
সেলফোন অপারেটররা জানান, বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা টাওয়ারগুলোয় বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটর দিয়ে সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে মোট ৪৪ হাজার ৬১০টি মোবাইল টাওয়ার রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ২২ হাজার ২১৮টি সাইট (মোবাইল টাওয়ার) অকার্যকর ছিল। আর ২১টি জেলায় বিটিসিএলের (পিএসটিএন) ৬৫টি সাইট অকার্যকর রয়েছে। অর্থাৎ নেটওয়ার্কের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৭১ শতাংশ টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ১৫টি জেলায় এনটিটিএনের ১৬৮টি পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স-গ্রাহকদের ইন্টারনেট সংযোগের কেন্দ্র) বন্ধ রয়েছে।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপকূলীয় নয় জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেটওয়ার্ক দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মোবাইল অপারেটররা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।’
অপারেটররা জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় নেটওয়ার্ক সচল রাখা হয়। কিন্তু জেনারেটর ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করছে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়। তবে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অচল হয়ে পড়া টাওয়ারের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে।
বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ১৫ ঘণ্টা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ ও কিছু এলাকায় আংশিক বন্ধ রেখেছে। আমরা জেনারেটর ও ব্যাটারি দিয়ে নেটওয়ার্ক সেবা চালু রেখেছি। তবে জেনারেটর ও ব্যাটারির সর্বোচ্চ সক্ষমতা ৮-১০ ঘণ্টা হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় নেটওয়ার্ক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। দ্রুত নেটওয়ার্ক সেবা চালু করতে আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
বিটিআরসি জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকায় গাছ ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ না থাকা এবং ইন্টারনেট কেবলে ক্ষতির কারণে শতাধিক আইএসপি অপারেটরের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার আইএসপিদের ৩২০টি পপের মধ্যে ২২৫টিই অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। ফলে উপকূলের প্রায় তিন লাখ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত আছে। জরুরি সেবা হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান।