দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে আজকের মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া লঘুচাপটি যদি ঘনীভূত হয়ে শক্তি বাড়ায় তাহলে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণ রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। ওমানের দেওয়া এই আরবি নামের অর্থ ‘বালু’।
আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর ও উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দপ্তরের সিদ্ধান্তে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশ নামের তালিকা দেয়। বর্তমানে যদি বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তাহলে সেই তালিকা থেকেই নাম রাখা হয়।
এবার সেই তালিকায় সামনে রয়েছে রেমাল-নাম। তাই বঙ্গোপসাগরে যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলেই এই নামটি রাখা হবে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ বলয় তৈরি হতে পারে। সেটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সেই নিম্নচাপই শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের রূপ নিতে পারে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২২ মে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে। যা শক্তি বাড়িয়ে ২৩ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড়টি ততটা শক্তিশালী হবে না বলেও মনে করছেন আবহাওয়াবীদরা। এখন পর্যন্ত অনুমান করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় হলে রেমালের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, লঘুচাপটি শক্তিশালী হলে পরবর্তী সময়ে সাইক্লোন তৈরি হতে পারে। লঘুচাপের প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পাবে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ২০ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণাবর্ত। এরপর সেটি ক্রমে শক্তি বাড়িয়ে ২৪ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পরদিন সন্ধ্যার পর তা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
উপকূলে লঘু চাপের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরনের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ খালিদ হোসাইন।
প্রথম সম্ভাবনা হিসেবে তিনি বলেন, যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে, তবে সিস্টেমের ডান পার্শ্ব তথা খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েক ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া প্রায় সারা দেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।
আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি এটি ওড়িশার আশপাশে ল্যান্ডফল করে, তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন চট্টগ্রাম ও বরিশালে ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। অন্যদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দুর্বল কনভারজেন্স অঞ্চল সারা দেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে। যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টি লক্ষ্য করা যেতে পারে প্রায় সারা দেশেই।
তিনি আরও বলেন, সিস্টেম যত বেশি শক্তিশালী হয়, ততো এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়ে আসে। যার ফলে মেঘের ব্যাসার্ধ কমে যায়। অন্যদিকে যত কম শক্তিশালী হয়, মেঘ তত দূরে ছড়ানো থাকে, যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। এসব কারণে বাংলাদেশে বেশ ভালো বৃষ্টিপাত হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।