রাউজান প্রতিনিধি মোঃ আবদুল লতিফ নাহিদ
চট্টগ্রামের রাউজানে বড় ভাইয়ের হাতে আপন ছোট মোঃ সোহাগ আলম (৫০) খুন হয়েছেন। ১৫-মে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খান পাড়া গ্রামের মমতাজের বাড়িতে। নিহত সোহাগ ঐ এলাকার মৃত মমতাজ মিয়া ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে বড় ভাই সোনা মিয়া ও খুন হওয়া ছোট ভাই সোহাগের পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক একটি মামলা নিয়ে বিরোধ চলছিল। বুধবার ঐ মামলার আদালতে সাক্ষী ছিলো। বিকালে আদালত থেকে আসার পর বড় ভাই সোনা মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্র দা-ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। এতে দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
একপর্যায়ে বড় ভাই সোনা মিয়া ধারালো ছুরি দিয়ে ছোট ভাই সোহাগকে আঘাত করতে শুরু করেন। ছুরি আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে মারা যান ছোট ভাই সোহাগ হোসেন। এঘটনায় নিহত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ান আকতার ও নিহত সোহাগ মিয়ার সৎভাই শাহেদের স্ত্রী কোহিনুর আকতার আহত হয়।
সোনা মিয়ার হাতে খুন হওয়া সোহাগের স্ত্রী গুলিয়ান আকতার বলেন, আমার স্বামী সোহাগ মিয়াকে আমার ভাসুর সোনা মিয়া ও তার পুত্র তারেক কুপিয়ে হত্যা করেছে। তারা আমার ও আমার জাঁ কোহিনুর আকতারকে বেদম ভাবে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার সময়ে আমার স্বামী সোহাগ মিয়া প্রাণ রক্ষা করতে তার সৎভাই শাহেদের ঘরে দৌড়ে আশ্রয় নেয়। শাহেদের ঘরের দরজা ও বাশের বেড়া ভেঙ্গে শাহেদের ঘরে প্রবেশ করে সোনা মিয়া ও তার পুত্র তারেক ধালালো ছুরি দিয়ে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করে। পারিবারিক বিরোধের মামলার জের ধরে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে সোনা মিয়া। আমি ২ ছেলে সন্তান ও এক কন্যা সন্তান নিয়ে কি করে বাচঁবো। আমার স্বামী সোহাগ মিয়ার হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
নিহত সোহাগ মিয়ার সৎভাই শাহেদের স্ত্রী কোহিনুর আকতার বলেন, সন্দ্যায় সোনা মিয়া ওতার পুত্র তারেক সহ তার পরিবারের সদস্যরা অতর্কিত ভাবে সোহাগ মিয়ার উপর ধারারো ছুরি দিয়ে হামলা করেন। ঐ সময়ে সোহাগ মিয়া তাদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করতে আমার স্বামী শাহেদের ঘরে আশ্রয় নেয়। আমার স্বামী শাহেদের ঘরের দরজা ও বাশের বেড়া ভেঙ্গে সোনা মিয়া ও তার পুত্র তারেক প্রবেশ করে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে সোহাগ মিয়াকে মারাত্বক ভাবে আহত করে। ঐ সময়ে সোহাগ মিয়াকে বাচাঁতে আমি ও সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ান আকতার এগিয়ে আসলে আমি ও গুলিয়ান আকতারকে ধারালো ছুরি দিয়ে হামালা করে আমরা দুজনকে আহত করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জানে আলম বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে মামলা নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে বড় ভাই ছোট ভাইকে হত্যা করেছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান এই ঘটনায় দুই পরিবারের প্রায় ৭/৮ জন আহত হয়েছে। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাহাড়তলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: রোকন উদ্দিন বলেন, মামলার একটি বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বড় ভাই ধারালো ছুরি দিয়ে ছোট ভাইকে খুন করেন। ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ছোট ভাইকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, বড় ভাইয়ের কাছে যেখানে ছোট ভাই নিরাপদ থাকবে। সেখানে আপন বড় ভাই সামান্য বিষয় নিয়ে তার ছোট ভাইকে ছুরি আঘাতে খুন করেছে। ঘটনাটি অত্যন্ত দুংখজনক। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাউজান রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবির, রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন, চুয়েট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এসআই জাবেদ মিয়া।
চুয়েট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এসআই জাবেদ মিয়া বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত সোনা মিয়া ওতার পুত্র তারেক সোনা মিয়ার স্ত্রীকে রাতেই অভিযাণ চালিয়ে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই অজয় দেব শীল বলেন, নিহত সোহাগ মিয়ার ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত সোনা মিয়া, তার পুত্র তারেক, সোনামিয়া স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে ।