রাজশাহী মহানগরীর পবা হতে অপহরণ করতকারি মুক্তিপণ দাবীকারী চক্রের মূলহোতাসহ ০৩ জন আসামীকে আটক এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র্যাব।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
২। ০৯ মে ২০২৪ তারিখ রাত্রী-০২.১৫ ঘটিকায় ঘটনাস্থল রাজশাহী মহানগরীর পবা থানাধীন তেঘর সাকিনস্থ অত্র মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তদন্তেপ্রাপ্ত ধৃত ২নং আসামী মোঃ কাওছার আলী (৩২), পিতা- মোঃ কলিম উদ্দিন এর বসত বাড়ির ভিতর তার শয়ন কক্ষ হতে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবীকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ রশিদুল ইসলাম (৪১), পিতা- মোঃ বরজাহান আলী, সাং- কাজলা (রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন), থানা- মতিহার, জেলা- রাজশাহী মহানগর ও তার সহযোগী এবং ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত ২। মোঃ কাওছার আলী (৩২), পিতা- মোঃ কলিম উদ্দিন, সাং- তেঘর, থানা- পবা, রাজশাহী মহানগরদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয় এবং ভিকটিম মোঃ জুবায়ের আহম্মেদ সীমান্ত (১৫), পিতা- মোঃ রুহুল আমিন, সাং- কেদারগঞ্জ পাড়া, থানা- চুয়াডাঙ্গা সদর, জেলা- চুয়াডাঙ্গা‘কে উদ্ধার করা হয়। তারপর ধৃত আসামীদ্বয় ও ভিকটিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অত্র মামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং তদন্তেপ্রাপ্ত অপর সহযোগী ৩নং আসামী মোঃ মেফতাহুল ইসলাম কিরন (৪২), পিতা- মৃত মহসীন আলী, মাতা- মৃত হাফিজা বেওয়া, স্থায়ী ও বর্তমান সাং- দুয়ারী (দক্ষিণ দুয়ারী পাড়া), নওহাটা পৌরসভা, থানা- পবা, রাজশাহী মহানগর‘কে তার ভাড়া বাসা হতে গ্রেফতার করে। উক্ত ঘটনার মূলহোতা ও তার সহযোগী অপর ০২জন আসামীর নিকট হতে মুক্তিপণ দাবীর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত মোবাইল ও সীমসহ ০৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
৩। বাদী ও ভিকটিমের বড় ভাই সাইমুন ইসলাম শান্ত (২৮) ঢাকায় পূর্বাশা পরিবহণের কাউন্টারে চাকরি করে। সেই সুবাদে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবীকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ আব্দুর রশিদ (৪১) এর সাথে পরিচয় ঘটে এবং উক্ত ধৃত এজাহারনামীয় ০১নং আসামী বাদীর বাড়ীতে একাধিকবার বেড়াতে যায়। গত ০৮/০৫/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান-০৮.০০ ঘটিকার সময় এজাহারনামীয় ০১নং আসামী মোঃ আব্দুর রশিদ (৪১) বাদীর বাড়ীতে বেড়াতে যায় এবং বাদীর বড় ভাইকে খোঁজ করে। একপর্যায়ে বাদীর বড় ভাই বাড়ীতে নাই মর্মে জানালেও উক্ত এজাহারনামীয় ০১নং আসামী বাদীর বাড়ীতে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। পরবর্তীতে বাদী ও তার বাড়ীর লোকজন বাড়ীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে সেই সুযোগে বাদীর ছোট ভাই ভিকটিম মোঃ জুবায়ের আহম্মেদ সীমান্ত (১৫)‘কে উক্ত তারিখ সকাল ০৯.৩০ ঘটিকার সময় চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন কেদারগঞ্জ পাড়াস্থ আলফালাহ জামে মসজিদের পার্শ্বে কাঁচা রাস্তার উপর কৌশলে ডেকে নিয়ে অজ্ঞাতানামা ৩/৪ জন আসামীর সহায়তায় অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় সাক্ষীগণ বিষয়টি দেখে বাদী ও তার বাড়ীর লোকজনকে জানালে ভিকটিমকে খুঁজে না পেয়ে খোঁজা-খুঁজি করতে থাকে। উক্ত তারিখ বিকাল ০৩.৩৬ ঘটিকার সময় উক্ত এজাহারনামীয় ০১নং আসামী মোঃ আব্দুর রশিদ বাদীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ টাকা) মুক্তিপণ দাবী করে তা না হলে ভিকটিমকে গুম করে দিবে বলে হুমকি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমের মেজো ভাই মোঃ ফারুক আহমেদ অন্তর (২৬) বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এজাহারনামীয় ০১ জন ও অজ্ঞাতনামা সহযোগী ৩/৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আইনে একটি অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবীর মামলা দায়ের করে।
৪। উক্ত ঘটনায় বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় র্যাব ও ছায়াতদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে র্যাবের গোয়েন্দা দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় অপহৃত ভিকটিম ও অপহরণকারী ও মুক্তিপণ দাবীকারী আসামীদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। সিপিএসসি, র্যাব-৫, রাজশাহীর একটি আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করতঃ রাজশাহী মহানগরীর পবা থানাধীন তেঘর সাকিনস্থ অত্র মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তদন্তেপ্রাপ্ত ধৃত ২নং আসামী মোঃ কাওছার আলী (৩২), পিতা- মোঃ কলিম উদ্দিন এর বসত বাড়ির ভিতর তার শয়ন কক্ষ হতে ভিকটিম উদ্ধার ও এজাহারনামীয় ০১নং আসামীসহ তদন্তেপ্রাপ্ত ০২নং আসামীকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর সহযোগী তদন্তেপ্রাপ্ত ০৩নং আসামীকে তার ভাড়া বাসা হতে গ্রেফতার করে।
৫। ভিকটিমের জবানবন্দীতে জানা যায় যে, তাকে লিচুর বাগান দেখানোর কথা বলে ফুসলাইয়া ও ভুলবুঝাইয়া এজাহারনামীয় ০১নং আসামীসহ ধৃত সহযোগী অপর আসামীদের সহযোগীতায় মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে অপহরণ করতঃ সহযোগী আসামী মোঃ কাউছার এর বাড়ীতে নিয়ে আসে এবং তার পরিবারের কাছে ০১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে নইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করার হুমকি প্রদান করে।
৬। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আসামীগন অত্যন্ত দুর্ধর্ষ, অপহরণকারী ও মুক্তিপণ দাবীকারী চক্রের সক্রীয় সদস্য। ধৃত কালে অত্র ঘটনার মূলহোতা এজাহারনামীয় ০১নং আসামী মোঃ আব্দুর রশিদসহ অপরাপর তদন্তে প্রাপ্ত ধৃত আসামীদ্বয় সাক্ষীদের সামনে অকপটে স্বীকার করে যে, তারা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিম ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে সখ্যতা তৈরী করে কৌশলে ফুসলাইয়া ও ভূলবুঝাইয়া ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে আসে ও তার লোকজনের কাছে মুক্তিপণ দাবী করে নইলে ভারতে পাচারের হুমকি প্রদান করেছে।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।