নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১২নং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট (৩২) এর বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ১৫ ই এপ্রিল রূপসী আকতার (সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ও প্যানেল চেয়ারম্যান) ডিসি অফিস , ইউএনও অফিস এবং দুদক অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সম্রাট এর বিরুদ্ধে এই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ঐ লিখিত অভিযোগে মোছাঃ রুপসী আক্তার উল্লেখ করেছেন- হরিনারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট ও ইউনিয়ন সচিব ওলিউল কালাম আজাদ মিলে অনেক দিন ধরে দূর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন। বরাদ্দকৃত কাজের কোন মিটিং ছাড়াই কৌশলে সচিবকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে পরে ইচ্ছামত গত বসিয়ে নেন। ১৫টি প্রকল্পের টাকার লামছাম কাজ করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান সম্রাট। এছাড়া হাট বাজার, ট্রেড লাইসেন্স, বাসা বাড়ির ট্যাক্স এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সর্বনিম্ন ৩০ লক্ষাধিক টাকা আয় রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সম্রাটের। তারপরেও তিন লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি দেখিয়েছেন।
মেম্বরদের বেতন নিয়েও চেয়ারম্যানের নানা টালবাহানা, ঠিকমতো বেতন তো দেননা আবার তা দিলেও তার থেকেও চারশত টাকা করে কেটে নেন। রূপসী আক্তার অভিযোগে উল্লেখ করেন আমি এর প্রতিবাদ করলে আমার বাড়ীতে রাতের বেলা চেয়ারম্যান ০৪ জন সন্ত্রাসী পাঠান। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে যায়।
রুপসী আক্তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান সম্রাট তাকে বলেন, আমি তোমাকে এখন পর্যন্ত সুস্থ্য রেখেছি সেটাই তোমার জন্য বড় কপাল। তিনি এ বিষয়ে ইবি থানায় অভিযোগ করতে গেলে ইবি থানার ওসি অজ্ঞাত নামে একটি অভিযোগ নেই। রুপসী আক্তারের দাবি এতে তার প্রাণ নাশের হুমকী আরও বেড়ে গেছে।
শুধু তাইনয়, এর আগে ইউপি সদস্য কামরুল হরিনারায়নপুরের মহিলা মার্কেটের দখল নিয়ে চেয়ারম্যান সম্রাটের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ইউপি সদস্যদের দাবী বিভিন্ন বিষয়ে ১৩ টি কমিটি থাকলেও চেয়ারম্যান কোন মাসিক সভা করেন না। আবার বিশ্ববিদ্যালয় ও জুট মিল থেকে যে ট্যাক্স আসে তাতেও নয় ছয় করা হয়ে থাকে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যারফলে চেয়ারম্যান দিনদিন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং সবকিছু তার নিজের মর্জিতে লুটপাট করে চলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন- ওই ইউনিয়ন পরিষদের তিন মহিলা মেম্বার। তার ফলশ্রুতিতে চেয়ারম্যানের গুন্ডা বাহিনী তাদেরকে হুমকি ধামকি ও লাঞ্চিত করেছে বলে তাদের অভিযোগ।
এছাড়াও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফের দেওয়া কাবিখার ৩শ টন স্পেশাল চাউলের বরাদ্দকৃত অর্থ ১৫ টি প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ দেখিয়েছেন চেয়ারম্যান সম্রাট। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য পিআইসি গঠন হলেও চেয়ারম্যান নিজে সব কাজ করেন এবং পিআইসিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
তাছাড়া দুস্থ্য ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ইউপি সদস্যের দেয়া তালিকা অনুযায়ী না দিয়ে চেয়ারম্যানের নিজস্ব কিশোর গ্যাং কে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিক্রির অভিযোগ করেন ঐ ইউপি সদস্যরা।
এবিষয়ে চেয়ারম্যান সম্রাটের সাথে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিকদের যা ইচ্ছা তাই লিখতে বলেন এবং এ বিষয়ে তাকে আর ফোন দেয়ার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপপরিচালক বলেন, আমরা হরিনারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট এর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।