জোরপূ*র্বক ধ*র্ষণ করে গ*র্ভ*পাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন
জোরপূ*র্বক ধ*র্ষণ করে গ*র্ভপাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তরমুজ ব্যবসার আড়ালে আত্মগোপনকারী ২২ বছর যাবৎ পলাতক আসামী তসলিম উদ্দিন (৫২)’কে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুলতা গাউসিয়া মার্কেট সংলগ্ন ফলপট্টি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন এলাকায় জোরপূর্বক ধ*র্ষণ করে গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তরমুজ ব্যবসার আড়ালে আত্মগোপনকারী দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ পলাতক আসামি ১। তসলিম উদ্দিন (৫২), পিতা-মৃত আমিজ উদ্দিন, সাং-দুবলিয়া, থানা-খানসামা, জেলা-দিনাজপুরকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুলতা গাউসিয়া মার্কেট সং*লগ্ন ফলপট্টি এলাকা থেকে ২৬/০৩/২০২৪ তারিখ ১৫.০০ ঘটিকায় গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামক এনজিওতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরিরত ছিল।
গ্রেফতারকৃত তসলিম ০৪ নং খামারপাড়া ইউনিয়নের ০৭টি বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজিং অফিসার ছিল এবং তারই অধীনে ভিকটিম বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিল। ভিকটিম ও আসামি একই কর্মসূচির আওতায় চাকরিরত থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচীর অংশ হিসাবে গ্রেফতারকৃত আসামি ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা বলত।
গ্রেফতারকৃত আসামির সাথে ভিকটিমের এভাবে নিয়মিত ঘনঘন যোগাযোগ হওয়ার দরুন দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত আসামি ছিল বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। এসময় ভিকটিম তার বিবাহিত জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল।
গ্রেফতারকৃত তসলিম ছিল লম্পট প্রকৃতির। স্কুল ও কলেজ জীবনে সে প্রতারণা করে একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিল বলে সে স্বীকার করে। ভিকটিমের সাথে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার একপর্যায়ে সে ভিকটিমকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রলুব্ধ করে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ভিকটিমের অসম্মতি থাকায় সে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলার নাম করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
একাধিকবার জোর*পূর্বক ধ*র্ষণের ফলে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ভিকটিম গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি তসলিমকে জানালে সে বিষয়টি অস্বীকার করে এবং গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ভিকটিম তাতে সম্মত না হয়ে তসলিম কে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবী করে এবং তার পক্ষে ভিকটিমকে বিয়ে করা অসম্ভবপর বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
অন্তঃস*ত্ত¡ ভিকটিম বাধ্য হয়ে বিষয়টি গ্রেফতারকৃত তসলিমের পরিবারকে জানালে তসলিম সম্মানহানির প্রতিশোধ নিতে প্রতারণা করে ভিকটিমকে তার সাথে একান্তে যোগাযোগের কথা বলে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে গ*র্ভপাত করায়। এসময় ভিকটিম ০৫ মাসের অন্তঃস*ত্ত¡ ছিল। মানসম্মান এবং গর্ভের সন্তান হারিয়ে ভিকটিম অসহায় ও আত*ঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং বিয়ের জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে।
এমনকি এসময় সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। তখন গ্রেফতারকৃত আসামি পূর্বের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে যোগদান করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
তখন ভিকটিম ও ভিকটিমের পরিবার বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধ*র্ষণসহ ভ্রুণ নষ্ট করার অপরাধে পেনাল কোডের ৩১৩ ধারায় দিনাজপুর জেলার খানসামা থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
উক্ত মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দিনাজপুর তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদানের রায় ঘোষণা করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই গ্রেফতারকৃত তসলিম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসে। এমনকি গ্রেফতার এড়াতে সে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। প্রথম ০২ বছর সে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান, এরপর ০৩ বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে।
এরপর ঢাকায় ফেরৎ এসে একটি লিমিটেড কোম্পানীর অর্ডারলি হিসেবে কাজ করে। রায় হওয়ার পর আত্মগোপনে থাকার উদ্দেশ্যে গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠ কর্মী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে। এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নামে বেনামে প্রতারণার মাধ্যমে সুকৌশলে ০৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় সে আত্মগোপন করে।
সে গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তের তরমুজ ব্যবসা শুরু করে। এভাবে দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক থাকার পর র্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দলের হাতে সে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত তসলিম উদ্দিন চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম। তার বাবা ছিলেন কৃষক এবং মা গৃহিনী। সে সৈয়দপুর কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে আইএসসি পাস করে। সে ছিল অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সে বিভিন্ন বাসায় লজিং থেকেই লেখাপড়া করেছে। তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মোঃ শামীম হোসেন
সহকারী পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)
পক্ষে পরিচালক