জীবননগর ভ্যানচালক ফজলু হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন
জীবননগর ভ্যানচালক মজনু খাঁ ওরফে ফজলু হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন|| বিজ্ঞ আদালতে আসামীর দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান, গ্রেফতার-১, উদ্ধার-ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ভ্যান
চুয়াডাঙ্গা জীবননগর থানাধীন সন্তোষপুর গ্রামের মোঃ কাশেম আলীর ছেলে ভ্যানচালক ভিকটিম মজনু খাঁ @ফজলু (২৯) গত ২০/০২/২০২৪ সন্ধ্যা অনুমান ০৭:০০ ঘটিকায় ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। পরবর্তীতে বাড়ীতে ফিরে না আসলে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে গত ২১/০২/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ০৭:০০ ঘটিকায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন লোকমুখে জানতে পারে ভিকটিম মজনু@ফজলু জীবননগর থানাধীন মনোহরপুর গ্রামের ভৈরব নদীর পাড়ে জনৈক মোশারফ গাইনের পানের বরজ সংলগ্ন কাঁচা রাস্তার পাশে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে এবং ভিকটিমের মুখ দিয়ে ফেনা জাতীয় পদার্থ বের হচ্ছে। ভিকটিমের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকের সহযোগিতায় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা সংক্রান্তে জীবননগর থানার অপমৃত্যু মামলা নং-০৭/২৪, তারিখ-২১/০২/২০২৪ খ্রিঃ রুজু হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার জনাব আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা মহোদয় ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য গোপন ও প্রকাশ্য নিবিড়ভাবে তদন্ত করার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম. জাবীদ হাসান এর নেতৃত্বে এসআই মোঃ ফিরোজ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২.০২.২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাত ২১:৩০ ঘটিকায় জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে সন্ধিদ্ধ আসামী মোঃ জব্বার মিয়া(২৯), পিং- মোঃ দলিল উদ্দিন, সাং-সন্তোষপুর, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গাকে পুলিশ হেফাযতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামী মোঃ জব্বার মিয়া ঘটনার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়, ভিকটিম ও আসামী পরস্পর আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই। আসামী বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে লোনের ঋণের দায়ে চরম বিপদগ্রস্থ। চলতি মাসের লোনের কিস্তি পরিশোধের কোন উপায় না থাকায় লোনের কিস্তির সর্বমোট ৬,৫০০/- টাকা পরিশোধের জন্য সে ভিকটিম মজনুকে হত্যা করে ভ্যান এবং মোবাইল নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার তিনদিন পূর্বে দুপুরের দিকে আসামী জীবননগরে কৃষিসেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে বন বিড়াল মারার কথা বলে ১০/- টাকার দানাদার কীটনাশক ক্রয় করে। ঘটনার দিন গত ২০.০২.২০২৪ খ্রিঃ সন্ধ্যা অনুমান ০৭:০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মজনু খাঁ ও ঘাতক আসামী জব্বার মিয়া ভ্যান নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়। কিছুদুর যেয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী জব্বার ভিকটিম মজনুকে বলে যে, আজ কিন্তু গয়েশপুর মাল মারতে হবে। ভ্যানযোগে গয়েশপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে রাত অনুমান ০৮:৩০ ঘটিকায় ধোপাখালী বাজারে পৌঁছে আসামী একটি দোকান হইতে একটি স্পিড ও একটি যৌন উত্তেজক স্নেহা বোতল ক্রয় করে এবং সেই দোকানের সামনে দাড়িয়ে আসামী জব্বার অর্ধেক স্পিড খায় ও বাকী স্পিডের মধ্যে কৌশলে কীটনাশক দানাদার মিশিয়ে রাখে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে আসামী জব্বার ভিকটিম মজনুকে স্পিডের বোতল দিয়ে বলে আমি খেয়েছি, বাকিটুকু তুই খা। ভিকটিম স্পিড খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে নিস্তেজ হয়ে ভ্যানের উপর শুয়ে পড়ে। আসামী জব্বার ভ্যান চালিয়ে রাত অনুমান ০৯:০০ ঘটিকায় নদীর ধারে পান বরজের কোনায় নিয়ে যায় এবং ভিকটিম মজনুকে মাটিতে শুয়াইয়ে দিয়ে ভিকটিমের কোমর হতে মোবাইল ও ভিকটিমের ভ্যান চালিয়ে জীবননগর হয়ে সোজা কোটচাঁদপুর চলে যায়। গত ২১.০২.২০২৪ তারিখ ডাকবাংলা বাজারে একটি মোবাইলের দোকানে গিয়ে ভিকটিম মজনুর মোবাইল ৫,৫০০/- টাকার বিক্রি করে এবং ভিকটিমের ভ্যান বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয়ের চেস্টা করে ব্যার্থ হয়। আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক আসামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের মোবাইল ফোন ও ভ্যান উদ্ধার করা হয়। বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে আসামী বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।
ধৃত আসামীর নাম ও ঠিকানাঃ
১। মোঃ জব্বার মিয়া(২৯), পিং- মোঃ দলিল উদ্দিন, সাং-সন্তোষপুর, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
উদ্ধারকৃত আলামতঃ
১। ভিকটিমের মোবাইল ফোন।
২। ভিকটিমের ভ্যান।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে জীবননগর থানার মামলা নং-২১, তারিখঃ ২৫.০২.২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩২৮/২০১ পেনাল কোড দায়ের করা হয়। আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।