শিশুকে অপহরণ করে হত্যা আসামী গ্রেফতার
কক্সবাজারের সদর থানাধীন পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ বছর বয়সী শিশু অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ক্লু-লেস মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলার রহস্য উন্মোচন এবং প্রধান ও একমাত্র আসামী মোঃ তারেক আজিজ’কে র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার ও অপহরণ কাজে ব্যবহৃত অটোরিক্সা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সৃষ্টিলগ্ন থেকে বাংলাদেশে অপরাধ নির্মূলে উল্লেখযোগ্য অবদান সম্পর্কে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ সমাজে বিরাজমান বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলের ক্ষেত্রে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন আন্তরিকতার সহিত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গত ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখ কক্সবাজার জেলার পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার মোঃ ইসহাকের ৪র্থ সন্তান মোঃ আবিদ (০৫) কে বিকেল ১৫.০০ ঘটিকার সময় থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকে তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে রাত ২৩.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের মায়ের মোবাইলে অপরিচিত একটি ফোন থেকে কল করে জানায় যে, তোমার ছেলেকে অপহরণ করেছি, ছেলেকে পেতে হলে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। না দিলে তোমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলব। এরপর ভিকটিমকে কোথাও না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার বাড়িতে অবস্থান করে। পরেরদিন অর্থাৎ গত ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখ সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন পিএমখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থ পুরাতন ব্রিক ফিল্ডের পূর্ব পার্শ্বে পুকুরে একটি শিশুর লাশ ভাসছে। উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে ঘাটের সামনে ভাসমান অবস্থা থেকে ভিকটিম (আবিদ) এর মৃতদেহ উদ্ধার করে। একটি অবুঝ শিশুকে অপহরণ করে মেরে ফেলায় এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এতে ভিকটিমের পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনাটি জানার সাথে সাথে র্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল ভিকটিমের অপহরণ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত ঘটনাটি ফেসবুক ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলে কক্সবাজারসহ দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ০৭/০২/২০২৩ ইং রাত ১২.১৫ ঘটিকায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি ক্লু-লেস হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে অপহরণকারীদের সনাক্তকরণসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের নিমিত্তে র্যাব-১৫, কক্সবাজার গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও র্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের একাধিক আভিযানিক দল ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অদ্য ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখ রাত ০০.১০ ঘটিকায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লু-লেস এই হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনপূর্বক প্রধান আসামী মোঃ তারেক আজিজ(২৬), পিতা-মোঃ আজিজ, সাং-মধ্যম জুমছড়ি, পিএমখালী ইউনিয়ন, থানা-সদর, জেলা-কক্সবাজার’কে কক্সবাজারের সদর থানাধীন পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ০১টি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও ০১টি বাটন মোবাইল ফোন।
৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহৃত ভিকটিমের ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত আসামী জানায় যে, পেশায় সে একজন অটোরিক্সা চালক এবং সম্পর্কে ভিকটিম তার আপন চাচাতো ভাই। ভিকটিমের বোনকে দীর্ঘদিন প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে সে তার ভাই আবিদকে (ভিকটিম) মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। সে প্রায় সময় আবিদের জন্য চকলেট, আচার ও অন্যান্য খাবার নিয়ে আসতো। যাতে তার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখ বিকেল ১৫.৩০ ঘটিকার সময় আবিদ (ভিকটিম) বাড়ির পাশের রাস্তায় খেলাধুলা করছিল। একপর্যায়ে তারেক আজিজ ভিকটিম আবিদ’কে চকলেটের লোভ দেখিয়ে তার অটোরিক্সায় বসিয়ে পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি হিন্দুপাড়াস্থ বাঁকখালী নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে নিয়ে খেলাধুলা করে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। সন্ধ্যার পরে নদীর পাড়ের পার্শ্বে একটি পুকুরপাড়ে তাকে বেঁধে রেখে বাড়িতে চলে আসে। সন্দেহ এড়াতে সেও বাড়ির লোকজনের সাথে আবিদ’কে খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে কোথাও না পেয়ে সবাই বাড়িতে চলে গেলে সে (তারেক আজিজ) আবার সেই পুকুরপাড়ে যায়। পুকুরপাড় থেকে আবিদের (ভিকটিম) মায়ের মোবাইলে কল দিয়ে জানায় যে, “তোর ছেলেকে অপহরণ করেছি, বাঁচাতে হলে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। না দিলে তোর ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলব।” এই বলে ফোনটা কেটে দেয়। পরে সে আবিদকে পুকুরে নিয়ে গিয়ে পানিতে চেপে ধরে মেরে ফেলে এবং তাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে আসে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।