নীল জলের রাজ্যে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি : মিরাজ মাহমুদ
সবুজের চাদরে ঘেরা পাহাড়- সমুদ্র, নদী,খাল,বিল ও হাওড়ের পরিবেষ্টিত সুজলা সুফলা-নয়নাভিরাম তৃণভূমি আমাদের এই দেশমাতৃকা। বাংলার এই স্নিগ্ধ প্রকৃতি যেন সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য নিদর্শন। হাজারো সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই দেশ । দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত সৌন্দর্যের ভান্ডার। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে বরাবরই বিস্ময়, বিমূঢ় ও আত্মহারা হয়েছে সকলেই।
আর প্রকৃতির এমন নির্যাস উপভোগ করতেই বেড়িয়ে পড়ে একদল ভ্রমণপিপাসু তাদের পিপাসা মেটাতে।স তাইতো শীতের এই মোক্ষম সময়ে বেড়িয়ে পড়লো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর ৫ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। যাদের পড়াশোনার বিষয়বস্তুই ভ্রমণব্যাবস্থাপনা। ভ্রমণ যাদের নেশার বস্তু ও গবেষণার ক্ষেত্র। অবশেষে ১ম বর্ষের একরাশ সিটি,প্রেজেন্টেশন, সেমিস্টার আর ভাইবার সেই দৌড়ঝাঁপ পেরিয়ে মুক্তির আনন্দ নিতে বেড়িয়ে পড়লো দেশের স্বর্গীয় দ্বীপ নীলের রাজ্য সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্য।
নাফ নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরের মাঝ দিয়ে জাহাজ ভ্রমণ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। উড়ে আসা গাঙ্গচিলেরা কি সুন্দর ভাবে জাহাজের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে তার সাথে মলিন বাতাসে স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় গানের সুরে সুরে এক আনন্দঘন পরিবেশে শুরু হয় সেন্ট মার্টিনের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ।
দক্ষিণের স্বর্গ নামের বাংলাদেশের একমাত্র নীল জলরাশির প্রবাল দ্বীপ – সেন্ট মার্টিন বা নারিকেল জিঞ্জিরা।বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কি: মি: দূরে উখিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১০ বর্গ কি:মি: আয়তনের এই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত।
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য।
অসীম এই স্বচ্ছ নীল জলের বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস ও মিতালি, সারি সারি নারিকেল গাছ, জোয়ার- ভাটায় জেগে উঠা প্রবাল, উড়ন্ত গাঙ্গচিল, পশ্চিম বীচের সোনালি সূর্যাস্ত ও সাদা বালুকাময় দ্বীপ যেন এক নৈস্বার্গিক সৌন্দর্য্য দুর্নিবার আকর্ষনে মুগ্ধ করে টেনে নিয়েছে নোবিপ্রবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ, উত্তর দিকের সৈকতের পানিতে মিলিত হয়ে যাওয়া আকাশ সেই সাথে মৃদু হাওয়ায় দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটা মনের মাঝে এক প্রাশান্তির অনুভুতিতে সময় কাটিয়েছে, বিকেলের সোনালি সূর্যাস্তের চাক্ষুষ দর্শক হয়ে লুফে নিয়েছে সেন্ট মার্টিনের অতুলনীয় অপরুপ সৌন্দর্যের ভান্ডার। আর তৈরি হয়েছে অনেক মুহুর্ত এবং এই রঙিন মুহুর্ত গুলোকে ফ্রেমবন্দী করে সযত্নে সংরক্ষণ করেছে সমুঠোফোনের এ্যালবামে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই শুরু হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এক অনন্য মিলনমেলা। খোলা – মেলা বালুকাময় সৈকতের সন্ধ্যায় অগণিত তারার আকাশের নীচে সমুদ্রের বিরামহীন গর্জনের মাঝে শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের গানের সুরে,কবিতার ছন্দে এক অফুরান আনন্দের আয়োজনে মেতে উঠে সবাই। এমন সন্ধ্যা হয়তোবা সবার ভাগ্যে খচিত থাকে না।
এই সন্ধ্যার গানের সুর ও কবিতার ছন্দগুলোই হয়তো কর্মব্যাস্তময় জীবনের ক্লান্তি,অবসাদ ও হতাশার গ্লানি কে মুছে দিয়েছে।
কেউ কেউ বা কিছু ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছে ঘাটের পাশে বর্শিতে ছিপ ফেলে।
এভাবেই সময় ফুরিয়ে সমাপ্ত হয় স্মৃতির পাতায় যুক্ত হওয়া আরেক নতুন অনুচ্ছেদের।শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবার মাঝে ফুটে উঠেছে এক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতির সম্পর্ক।
প্রকৃতির এই অসীম সৌন্দর্য যেন বিনষ্ট না হয় সেই প্রকৃতিপ্রেমী মনন থেকে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর শ্রদ্ধেয় লেকচারার সঞ্জয় কুমার আচার্জি অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন,
প্রবাল, পাখি, মাছ, শামুক, ঝিনুক, কেওড়াবন সহ অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদে ভরপুর এই সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এক আকর্ষণীয় ভ্রমণ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপটির সাসটেইনেবিলিটি ধরে রাখার জন্য স্টেইকহোল্ডারদের বিশেষ করে সরকার ও লোকাল কমিউনিটিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।