নৈশপ্রহরীকে হত্যা করে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭
নোয়াখালীর কবিরহাটে নৈশপ্রহরীকে হত্যা করে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় নৈশপ্রহরীকে হত্যা করে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় মামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাত ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছেডাকাতি হওয়া ৬০ ভরি স্বর্ণ, ১৬০ ভরি রুপা, নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আগ্নেয়াস্ত্র।
আজ সোমবার সকাল ১১টায় জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম পিপিএম(বার), এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
গত ৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার ফজর নামাজের সময় কবিরহাট থানায় খবর আসে চাপরাশিরহাট বাজারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। খবর পেয়ে কবিরহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে জানা যায়, আনুমানিক ১০/১৫ জনের একটি ডাকাত দল রাত ৩ টার পর চাপরাশিরহাট বাজারে প্রবেশ করে নৈশ প্রহরীসহ অন্যান্য চলাচলকারী লোকজনদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে আনুমানিক দেড়/দুই ঘণ্টা ব্যাপী ডাকাতি লুটপাট চালায়। এসময় ডাকাত দলকে বাধা দিতে গেলে তারা নৈশপ্রহরী শহিদুল্লাহকে মাথায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ হত্যাসহ ডাকাতির ঘটনায় কবিরহাট থানায় পেনাল কোড ৩৯৬ ধারায় একটি মামলা করা হয়।
ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলার পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজীব পিপিএমের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোর্তাহিন বিল্লাহ,ওসি কবিরহাট রফিকুল ইসলাম,ওসি ডিবি নাজিমউদ্দীন,ওসি তদন্ত কবিরহাট থানা, এসআই (নিরস্ত্র) কৃষ্ণ কুমার দাস ও এসআই (নিরস্ত্র) ফিরোজ আহমেদের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করেন।
নির্দেশনা মোতাবেক আভিযানিক দল বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদের শনাক্ত করে। এসময় তারা গোপন সূত্রে সংবাদ পায় ডাকাতদের বহনকারী পিকআপ চালক নোমান লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানা এলাকায় লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রয়ের চেষ্টা করছেন। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে নোমানের অবস্থান চিহ্নিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেগমগঞ্জ সার্কেল জনাব নাজমুল হাসান রাজিবের নেতৃত্বে ওসি ডিবি,নোয়াখালী ও এস আই ফিরোজসহ আভিযানিক দল লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার মুন্সিরহাট এলাকা থেকে নোমান’কে ১০ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, লুণ্ঠিত মালামাল তিনি তার পূর্ব পরিচিত ওই এলাকারই স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. সুজনের কাছে বিক্রি করার জন্য দেন। এ তথ্য প্রাপ্ত হয়ে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করার জন্য সুজনকে তার ঘর থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুজন লুণ্ঠিত মালামাল গ্রহণ এবং বিক্রি করতে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সুজন জানান, লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার কমলনগর থানার চরলরেন্স বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কমল সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে সুজনের মাধ্যমে চরলরেন্স বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কমলের দোকান এবং কৃষ্ণ কমলকে শনাক্ত করা হয়। কৃষ্ণ কমলকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি সুজনের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার কেনার কথা স্বীকার করেন। এসময় তার হেফাজত থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। লুণ্ঠিত হওয়া রুপার খোঁজে সুজন এবং কৃষ্ণ কমলকে পালাক্রমে জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সুজন জানান, তার কাছে লুণ্ঠিত হওয়া রুপা গচ্ছিত রয়েছে। সুজনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক কমলনগর থানাধীন মুন্সিরহাট বাজারে সুজনের মালিকানাধীন মা স্বর্ণ শিল্পালয়ের সিন্দুক থেকে লুণ্ঠিত ১৬০ ভরি রুপা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও আটককৃত ডাকাত নোমানের দেয়া তথ্য এবং অন্যান্য জায়গা থেকে প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী আসামী মো. শাহাদাত হোসেনকে (৩২) ওসি তদন্ত,কবিরহাট ও বেগমগঞ্জ থানা এবং এসআই কৃষ্ণের নেতৃত্বে বেগমগঞ্জ থানাধীন চৌমুহনী বাজারে অবস্থিত ঢাকা হোটেল থেকে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আসামী শাহাদাত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আভিযানিক দল মো. সাদ্দাম হোসেন ওরফে জিতুকে(৩০) সোনাইমুড়ী থানাধীন বজরা এলাকা থেকে এবং আসামী সালাউদ্দিন (৩২) কে বেগমগঞ্জ থানাধীন চৌমুহনী বাজার সংলগ্ন রেল লাইন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোর্তাহিন বিল্লাহ ও ওসি কবিরহাট রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল কবিরহাট থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই চাঞ্চল্যকর ডাকাতির অন্যতম আসামী মো. মিজানুর রহমান রনিকে (৩৬) কবিরহাট থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।