কুষ্টিয়ার নির্মাণ শ্রমিকরা অসহায় জীবন যাপন করছে
সামনে জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। বিএনপি ডাকা সারাদেশে দেশে হরতাল, অবরোধের কারণে এবং জিনিসপত্র দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বাড়িঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ বন্ধ করে রেখেছে। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে কুষ্টিয়ার অধিকাংশ নির্মাণ শ্রমিক।
তারা নতুন বাড়িঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দৈনিক মজুরিতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আরও কত দিন এভাবে কর্মহীন থাকতে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার ছয় রাস্তার মোড়ে এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে বেশ কিছু নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নির্মাণ শ্রমিক পেশার মানুষ এখন দিনাতিপাত করছেন অতি কষ্টে।
এমনিতেই দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় নির্মাণ শ্রমিকদের। কর্মক্ষেত্র বা নির্মাণস্থলে নানা দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই নির্মাণ শ্রমিকদের অঙ্গহানি ঘটছে কেউ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন, কেউ অকালমৃত্যুর বরণ করছে। শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন এমন সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ শ্রমিক মারা যান নির্মাণস্থলে উঁচু থেকে নিচে পড়ে, ৭-৮ শতাংশ শ্রমিক মারা যান আগুনে পুড়ে ও চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এবং প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমিক দুর্ঘটনায় হাত-পা কেটে যাওয়া, আঙুল কেটে পড়ে যাওয়া বা এমন নানামাত্রার অঙ্গহানির শিকার হয়ে থাকেন। স্বাভাবিক সময়েও নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এসব নির্মাণশ্রমিক এখন বিএনপি ডাকা সারাদেশে দেশে হরতাল ও অবরোধের কারণে আরও বিপাকে পড়েছে। এখন অনেকেই জীবিকা হারিয়ে সংকটে রয়েছে।
এ নিয়ে হরিপুর এলাকার নির্মাণ শ্রমিক গফুর মিয়া জানান, শ্রমিকরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দুবেলা খেতে পারেন, সেজন্য সরকারের কাছে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাই। মাসখানেক যাবৎ কাজ না থাকায় এনজিও থেকে লোন নিয়েছি, সেই টাকায় ঘরে বসে বসে খাচ্ছি।
হরিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ কাজ নেই। ঘরে খাবারও নেই। তিন বছরের বাচ্চাকে খাবার দিতে পারছি না। কাজও পাচ্ছি না। সংসারে চারজন মানুষ। এ অবস্থায় আধাপেট খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটছে। কাজ না পেলে সামনে না খেয়ে মরতে হবে। কুষ্টিয়া মিরপর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডর সুমনের অবস্থাও একই রকম। প্রায় ১ সপ্তাহ কাজ নেই।
কুষ্টিয়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড ঘোষপাড়া এলাকায় বসবাসকারী নির্মাণ শ্রমিক মহিদুল জানান আজ পাঁচ দিন যাবত কাজ নেই। প্রতিদিন এখানে আসি আবার প্রতিদিন কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। সংসারের খানেওয়ালা পাঁচজন কি করবো বুঝতে পারছিনা।
এদিকে দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অংশীদার নির্মাণ ও আবাসন খাত। কুষ্টিয়ায় প্রায় শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক খেয়ে না খেয়ে বড় কষ্টে আছেন। চরম এই দুর্দিনে এ খাতের শ্রমিকরা স্ত্রী- সন্তান নিয়ে বড় অসহায়। ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে তাঁদের অনেকে ভেঙে পড়েছেন। অনেকেই ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজ না থাকায় সময় মতন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকই।
X